৯৯। ১৪ নভেম্বর গ্রাম বাংলায় জঙ্গী শাহীর কর্তৃক অচল

শফিকুল ইসলাম

<৬,৯৯,১৬০-১৬১>

শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
গ্রাম বাংলায় জঙ্গীশাহীর কর্তৃত্ব অচল স্বাধীন বাংলা

১ম বর্যঃ ১৯শ সংখ্যা

১৪ নভেম্বর, ১৯৭১

 

আয় নাই, ঘরে খাদ্য নাই, ভয়াবহ সঙ্কট
গ্রাম বাংলায় জঙ্গীশাহীর কর্তৃত্ব অচল
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)

.

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে পাক জঙ্গী শাহীর কর্তৃত্ব সম্পূর্ণ ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে। অধিকৃত এলাকার বিভিন্ন অঞ্চল হইতে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতাগণ যে প্রত্যক্ষদর্শীর রিপোর্ট পাঠাইয়াছেন তাহাতে বলা হয়, সৈন্যহাহিনী শহরগুলি হইতে সচারচর বাহির হয় না। তদুপরি পাক জঙ্গীশাহী ভারতের সহিত যুদ্ধ প্রস্তুতির অঙ্গ হিহাবে সেনাবাহিনীর প্রধান অংশকে সীমান্ত অঞ্চলে মোতায়েন করায় অধিকৃত বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে জঙ্গীশাহীর শাসন কার্যত রাজাকার ও অবাঙ্গালী পুলিশ বাহিনীর লুটপাট ও জবরদস্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ কিন্তু অধিকৃত এলাকায় পাক সরকারের প্রশাশন সম্পূর্ণ অচল এবং মুক্তিবাহিনী ও স্থানীয় ভিত্তিতে গড়িয়া ওঠা ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে পরিষদগুলির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হইহাছে। এইসব এলাকায় বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক প্রশাসন চালু করা সম্ভব এবং অত্যান্ত দরকার।

.

পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক অধিকৃত শহরগুলিতে স্কুল-কলেজ কিছু কিছু খোলা হইলেও গ্রামাঞ্চলে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধ।

.

পাক দস্যু বাহিনী সামরিক অভিযান চালাইবার পর স্থানীয় সমাজ বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি তথা পাক দালালেরা জনসাধারনের উপর নির্যাতন, লুটতরাজ প্রভৃতি দুষ্কর্ম করে। কিন্তু পরবর্তীকালে মুক্তিহাহিনী ও স্থানীয় গেরিলা বাহিনীগুলি সংঘবদ্ধ হইয়া ইহাদিগকে শায়েস্তা করে। বর্তমানে এই মহলটি একেবারে কোনঠাসা এবং মুখচেনা পাক দালালেরা সকলেই গিয়া শহরে আশ্রয় লইয়াছে। গ্রামে যারা আছে তাহারা মৌখিকভাবে হইলেও মুক্তিসংগ্রামের প্রতি সহানুভূতি জানাইয়াছে। কিছু কিছু ভুয়া মুক্তিফৌজ জনসাধারনের উপর অত্যাচার করিত। মুক্তিবাহিনী ও গেরিরা বাহিনীগুলো ইহাদিগকে ঠাণ্ডা করিয়াছে।

.

অর্থনৈতিক সংকট

হানাদার বাহিনীর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের ফলে জনজীবনে দারুন অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হইয়াছে। গত আউশের মওশুমে ধান হয় নাই-পাক সেনাদের অত্যাচারে কৃষকরা ধান বুনিতে ও কাটিতে পারে নাই। আমন ধানের আবাদ হইয়াছে কম শ্রমিক, ব্যবসায়ী, দোকানদার, কর্মচারী, ক্ষেতমজুর প্রভৃতির আয়ের কোন পথ নাই। ধান- চাউলের দর কোন কোন জায়গায় খুবই বেশী- বরিশালের একটি এলাকা হইতে আমাদের প্রতিনিধি জানাইতাছেন, সেখানে নতুন আউশের চাল প্রতিমন ৬০ টাকা দরে ক্রয়-বিক্রয় হইতেছে। আবার যোগাযোগের ব্যাবস্থার ওভাবে পার্শ্ববর্তী উদ্ধৃত্ত এলাকা হইতে ধান চাউল আমদানী করা যাইতেছে না।

.

বরিশাল প্রতিনিধি জানান, কোন কোন এলাকায় শতকরা ৯০ জন অধিবাসী উপবাসে দিন কাটাইতেছে। পাক জঙ্গীশাহী খাদ্যশস্য সরবরাহের ব্যবস্থা করিবে না ইহা জানা কথাই। তাই বাংলাদেশ সরকারের উচিত এই সব গ্রামাঞ্চলে খাদ্যশস্য সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া। বস্তুত খাদ্যসঙ্কট এরূপ তীব্র যে, আমাদের সংবাদদাতা লিখিয়াছেন, এই সমস্যা সমাধানের উপর মুক্তি সংগ্রামের ভবিষ্যত বহুল পরিমাণে নির্ভরশীল।

Scroll to Top