৪৩. ১৪ জুলাই বাংলাদেশ আন্দোলনের খবর

অনুবাদঃ নিয়াজ মেহেদী এবং ওমার ফাইলাসূফ

<৬, ৪৩, ৬৪৭-৬৫২>

শিরোনামঃ বাংলাদেশ আন্দোলনের খবর

সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ নিউজ লেটার শিকাগোঃ নং ৫

তারিখঃ ১৫ জুলাই, ১৯৭১

.

বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পিস অর্গানাইজেশনগুলোর সমর্থন

উইসকনসিন প্রদেশের মিলওয়াকি শহরে গত ২৫-২৭ জুন অনুষ্ঠিত পিপলস কোয়ালিশন ফর পিস জাস্টিস (পিসিপিজে) এর বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রেজুলেশন পাশ করা হয়েছে। পিপলস কোয়ালিশন এই দেশের প্রায় শতাধিক পিস অর্গানাইজেশনের মূল সংগঠন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৮০০ জন ডেলিগেট উক্ত সম্মেলনে অংশগ্রহন করেন।

 

সভায় সূচনা বক্তব্যে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত ড. ইকবাল আহমেদ উপস্থিত ডেলিগেটদের সামনে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির উপর একটি মূল্যায়ন পাঠ করেন। পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক জান্তাকে সহায়তার যে নীতি যুক্তরাষ্ট্র অনুসরন করছে তার বিরুদ্ধে এবং দক্ষিন এশিয়ায় আরেকটি ভিয়েতনাম পরিস্থিতির সৃষ্টি যেনো না হয় সে ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নিতে ড. আহমেদ উপস্থিত ডেলিগেট বৃন্দের প্রতি আহবান জানান।

 

বাংলাদেশ পরিস্থিতির উপর দিনব্যপী ব্রিফিং এর পর বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগ আলোচ্য বিষয়ে উপস্থিত সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষন করে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম দ্বারা উক্ত ব্রিফিং এ পিসিপিজে এবং তার অংগ সংগঠনগুলো পৃথকভাবে এবং একসাথে কনফারেন্সে বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে আলোচনা ও ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে।   

 

পিসিপিজের পক্ষ থেকে ওয়াশিংটন ডিসি অফিসের সদস্যবৃন্দের প্রতি নিম্নোক্ত সাজেশন পাঠানো হয়ঃ

তিন সপ্তাহের ভেতর (কমপক্ষে) যুক্তরাষ্ট্রকে সাম্প্রতিক সময়ের নিকৃষ্টতম মানবীয় বিপর্যয় ঘটানো থেকে বিরত রাখতে আমরা কি পদক্ষেপ নিতে পারি?

পিসিপিজে এর জাতীয় পরিকল্পনাকে সমর্থন করা

পিপলস কোয়ালিশন তিনটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করেছেঃ

নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন এবং সানফ্রান্সিসকো। আপনি যদি এই তিন এলাকার বাসিন্দা হয়ে থাকেন, তাহলে পিসিপিজে আয়োজিত প্রতিবাদ সভার বিষয়ে খোজ করুন এবং রিক্রুটমেন্ট, মিডিয়া এডুকেশন সহ অন্যান্য কর্মসূচীতে অংশ নিন। (এবং একই সাথে মে দিবসের বিশেষ ট্রাইব অ্যাকশনের ব্যাপারে খবর নিন।)

আভ্যন্তরীণ অন্যান্য কর্মসূচীগুলোতে অংশ নিন

পূর্ব পাকিস্তান ইস্যুতে আপনার চারপাশের গ্রুপগুলোর অবস্থান সম্পর্কে যত দ্রুত সম্ভব (খুব বেশী হলে এক মাসের ভেতর) খোঁজ নিন। তাদেরকে যথাসম্ভব সাহায্য-সহায়তা করুন।

স্থানীয় প্রতিবাদ সভা আয়োজন

এয়ার ফোর্স, সামরিক বাহিনী অথবা ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের সাপ্লাই এজেন্সি অথবা কনট্রাক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে সামনে কংগ্রেসের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পেন্টাগনের পাকিস্তানে অস্ত্র শিপমেন্ট চালিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ আয়োজন। (নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার ২২ এবং ২৫শে জুন তারিখের সংখ্যা দৃষ্টব্য।)

লবিং

পাকিস্তানকে সকল প্রকার সাহায্য দেয়া থেকে বিরত থাকতে কংগ্রেসম্যানদের প্রতি লিখিত আহবান জানাতে চার্চগুলোকে উদ্বুদ্ধ করা। একই সাথে গেলাহার অ্যামেন্ড, এইচ.আর. ৮৯৬১ দ্য সাক্সবে-চার্চ অ্যামেন্ডমেন্ট থেকে ফরেন অ্যাসিসটেন্স অ্যাক্ট (সিনেটে) এর প্রতি সমর্থন আদায়।

এছাড়া স্টেট ডিপার্টমেন্টে (পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কিত রিপোর্ট সমূহ গোপন রাখার প্রতিবাদ জানানোর জন্য)– নিক্সন এবং সিনেটের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিশন ইত্যাদি অফিসে তার প্রেরণ। এছাড়া বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধান ও গবেষণার জন্য নিম্নোক্ত স্থানীয় পিস গ্রুপগুলোর সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখুনঃ

জাতীয়ঃ পিসিপিজে অফিস – (২০২) ৭৩৭-৬৮০০;

বাংলাদেশ লীগ(ওয়াশিংটন) (৭০৩) ৯৩১-২৯৯৭;

নিউ ইয়র্ক (বাংলাদেশ) (২১২) ৬৮৫-৪৫৩০;

শিকাগো (বি.ডি.) (৩১২) ২৮৮-০২৭২৮;

সান ফ্রান্সিসকো (বি.ডি.) (৪১৫)৩২৫-৫৭৯৬;

ফিলাডেলফিয়া (২১৫) ৭৪৭-৪৭৪৭;

 

পাকিস্তানকে অস্ত্রসহায়তা দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষনা

যুক্তরাষ্ট্র কতৃক পাকিস্তানকে অস্ত্র সহায়তা দেয়ার প্রতিবাদে তিনটি জেলা শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষনা করেছে পিস অর্গানাইজেশন গুলোর জোট। ২৫ ডাব্লিউ জ্যাকসনের ক্রাইস্ট-দ্য-কিং চার্চে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে পিসিপিজে কো-অর্ডিনেটর সিডনি লেনস সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা পাকিস্তানে কুখ্যাত একনায়কতন্ত্রকে জিইয়ে রাখার কাজে খরচ করা হচ্ছে। লেনস বলেন পিপলস কোয়ালিশন নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন এবং সান ফ্রান্সিসকোর প্রাদেশিক ভবনগুলোর সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচী আয়োজনের চিন্তা ভাবনা করছে। জোটভূক্ত আরেকটি সংগঠন ‘মেয়ডে ট্রাইব’ এর স্পোকসম্যান ডেভিড বুরাক বলেন তার সংগঠন ‘নিউ ইয়র্কের জাহাজে অস্ত্র বোঝাই কমিয়ে যেনো অর্ধেকে আনা হয়’ সেই দাবীতে একটি জোরালো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী দেয়ার পরিকল্পনা করছে। অবশ্য সেই কর্মসূচীর ভেতর কি থাকছে বা কবে ঘোষনা করা হবে সে বিষয়ে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদেরকে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি। (সান-টাইমস। জুলাই ১, ১৯৭১ শিকাগো)

 

উইসকনসিন এর পিস গ্রুপগুলোর প্রতিবাদ আয়োজনের খবর

ম্যাডিসনে গত ৩ জুলাই পাকিস্তান স্টুডেন্টস কনভেনশন চলাকালে তার সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেছে উইসনসিনের পিস গ্রুপ-গুলোর জোট। উইসকনসিন এলায়েন্স ইন অ্যাসোসিয়েশন এবং আমেরিকান সার্ভিসমেনস ইউনিয়ন (এএসইউ) নামক দুটি সংগঠন যৌথভাবে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। ভেতরে কনফারেন্সে আলোচনা চলাকালে বাইরে প্লাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদে অংশ নেয় উক্ত সংগঠনগুলোর সদস্যরা। এর আগে উক্ত কর্মসূচীর বিষয়ে একটি প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন করা হয়, সেখানে আয়োজক সংগঠনগুলো জানায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের আগমন উপলক্ষ্যে বিমানবন্দরের সামনে আরেকটি বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন তারা। কিন্তু শেষ মুহুর্তে পাক রাষ্ট্রদূত সফর বাতিল করায় সেই বিক্ষোভ আর আয়োজিত হয়নি। অবস্থান কর্মসূচী শেষে পিস সংগঠনের জোট এবং এএসইউ এর সৌজন্যে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়, যেখানে বাংলাদেশ বিষয়ে আলোচনা এবং বিভিন্ন তথ্য বিলি করা হয়। সভায় আলোচনা করেন ড.ইকবাল আহমেদ এবং জনাব মোজাম্মেল হক। বক্তারা বাংলাদেশ এবং বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে উপস্থিত জনতার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এছাড়া বাংলাদেশ বিষয়ে টেলিভিশন ও বেতারে প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান সেখানে প্রদর্শন করা হয়।

 

বিডিএল বোর্ড মিটিং

গত ৩রা জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগের বোর্ড অফ ডিরেক্টরসদের সভা। উক্ত সভায় বিডিএল এর কার্যক্রম ও কর্মসূচী সমূহ পুনরায় ঘোষনা করা হয়।

.

বিডিএল, ইউএসএ এবং কানাডাতে থাকা বাংলাদেশি সকল গ্রুপকে তাদের স্থানীয় শান্তি সংস্থার সাথে যোগাযোগ করতে এবং তাদের সাথে তাদের কর্মকান্ড সমন্বয় করতে অনুরোধ করেছে। নিকটবর্তী শান্তি সংস্থার ঠিকানা ও ফোন নং মিঃ ব্র্যাড লিটল, ১০২৯ ভারমন্ট অ্যাভিনিউ, নিউইয়র্ক ওয়াশিংটন ডি.সি.(ফোনঃ (২০২) ৭২৭-৮৬০০) এর নিকট হতে পাওয়া যাবে।

.

পূর্ব বাংলার বন্ধুগন

২৪ জানুয়ারি, মঙ্গলবার, চতুর্থ আর্চ ষ্ট্রীটে ফ্রেন্ডস মিটিং হলে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে চিন্তিত একদল নাগরিক গঠন করেন “ফ্রেন্ডস অফ ইষ্ট বেঙ্গল(পুর্ব বাংলার বন্ধুগন)” নাম একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। যারা এখানে যোগ দিতে চায় তাদের প্রতি দরজা খোলা ছিল। নিমোক্ত উদ্দেশ্য ঠিক করা হয়েছিলঃ

 

১. ২৫শে মার্চ,১৯৭১ থেকে পুর্ব বাংলার মানুষের উপর সামরিক বাহিনী দ্বারা যে অত্যাচার চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করা।

২. পূর্ব বাংলার মানুষের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক সংকল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

৩. লক্ষ্য সফল করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের উপর প্রভাব বিস্তার করা।

যারা “ফ্রেন্ডস অফ ইষ্ট বেঙ্গল (পুর্ব বাংলার বন্ধুগন)” এ যোগ দিতে চান বা আমাদের সম্পর্কে আরো জানতে চান তারা যোগাযোগ করতে পারেনঃ

“ফ্রেন্ডস অফ ইষ্ট বেঙ্গল (পুর্ব বাংলার বন্ধুগন)”

কেয়ার/অফ চার্লস খান

৩০৫, লোগান হল,

পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়

৫৯৪-৮৫৬৩

জিআর২-৩৯৬৯

“কলম্বিয়া স্টুডেন্টস ফর বাংলাদেশ (বাংলাদেশের জন্য কলম্বিয়ার ছাত্র-ছাত্রী)”

.

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্রছাত্রী পূর্ব বাংলার ভয়ানক পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় ৪০০ ছাত্র-ছাত্রী ও অধ্যাপকের স্বাক্ষরযুক্ত একটি পিটিশন জাতিসংঘের নিকট উপস্থাপন করেন। এই পিটিশনে কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছিল যাতে বাংলাদেশে রক্তগঙ্গা বন্ধ হয়। বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে দুজন নোবেল বিজয়ী ও ছিলেন।

.

কানাডাতে জনসভা

১৬ জুন তারিখে ব্রিটিশ-কল্মবিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের, ইন্টারন্যাশনাল হাউজে একটি জনসভায় গান্ধী পিস ফাউন্ডেশনের (গান্ধী শান্তি সংস্থা) জয় প্রকাশ নারায়ণের বাংলাদেশের অবস্থা নিয়ে কথা বলেন এবং তাঁর বক্তব্যে নিমোক্ত লক্ষ্যগুলো গৃহীত হয়।

 

       “আমরা পাকিস্তানের রাস্ত্রপতির নিকট আহবান জানাই যাতে সে যাদের নামে সে দেশ শাসন করে তাদের উপর জুলুম করা বন্ধ করেন এবং জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত যারা জীবিত আছেন তাদের সাথে আলোচনার দরজা খুলে দেন যাতে পুর্ব পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক এবং দায়িত্বশীল সরকার পুনরধিষ্ঠিত করা যায়।

 .

ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ব্যারি এম. মরিস কর্তৃক ১৬ জুন, ১৯৭১ তারিখে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির এশিয়ান স্টাডি সেন্টারের অধ্যাপক র‍্যালফ ডব্লিউ নিকোলাসের নিকট পাঠানো হয়েছিল।

 

 

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশান অফ কুইবেক (কুইবেকে বাংলাদেশের সমিতি)

       নাইয়ুম চৌধুরী, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশান অফ কুইবেক এর সাধারণ সম্পাদক বলেনঃ

“পদ্মা” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র এবং গোলাবারুদ বহন করে মন্ট্রিয়ল বন্দরে পৌঁছেছে। এর উদ্দেশ্য কানাডার তৈরি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর স্যাবর জেটের যন্ত্রাংশ বোঝাই করা। মন্ট্রিয়ল সাংবাদিকদের সময়মত নেয়া এই পদক্ষেপের কারনে কানাডার অস্ত্র রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা স্থাপন করা হয়।

       আমরা উত্তর আমেরিকা ও পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের উপর সতর্ক নজর রাখছি, এবং স্থানীয় পত্রিকা ও সহানুভূতিশীল কানাডিয়ানদের সাথে কাজ করে এই ষড়যন্ত্রের পর্দা কানাডার নাগরিকদের জন্য উন্মোচনের চেষ্টা করছি।

       “পদ্মার” আগমনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে জাতীয় ট্রেড ইউনিয়নের সম্মেলন সহ বেশকিছু শ্রমজীবীদের সংগঠন দ্বারা সমর্থিত হয়েছিল এবং তারা এতে যোগও দিয়েছিল।

 

                             মিশিগান থেকে রিপোর্ট (মিশিগান থেকে প্রতিবেদন)

       মিশিগান থেকে মিঃ মোজাম্মেল হক বলেনঃ

       ২৯ জুন আমি “শান্তির জন্য আরেকটি মা” সম্মেলনে যোগদান করার জন্য গ্র্যান্ড র‍্যাপিডে গিয়েছিলাম তথ্য সংক্রান্ত উপকরন দিয়ে আসতে এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতির ব্যাপারে কথা বলতে।

       আমরা একটি তহবিল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেছি মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। এম.এস.ইউ এর ৪০০০ শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক র‍্যালফ নিকোলাস(নৃতত্ববিদ্যার অধ্যাপক), অধ্যাপক বিল রস(সভাপতি, দক্ষিন-পুর্ব এশিয়ান স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট) এবং অধ্যাপক রিচার্ড নিয়েকফ এই তহবিলে দান করেছেন।

       এম.এস.ইউতে “ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশ”র সাথে একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা তহবিল সংগ্রহের জন্য বাকেট ডিনার চালু করেছে। প্রথম সপ্তাহেই ডিনারের প্রায় ৩০০ টিকেট বিক্রয় হয়েছে। এই ডিনারে বাংলাদেশ নিয়ে একটি আলোচনা থাকবে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে  ডক্টর. জুমজা আলভী শ্রোতাবৃন্দের সাথে বাংলাদেশের উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলবেন।

       (দয়া করে আমাদের আপনার গ্রুপের কার্যক্রম সম্পর্কে জানাবেন। আপনাদের অনুষ্ঠানগুলো হয়তো আমাদের নতুন পরিকল্পনার আইডিয়া দিতে পারে অন্য একটি গ্রুপঃ বাংলাদেশ নিউজলেটারের জন্য)

 

 

ডেলাওয়ার ভ্যালীতে বাংলাদেশের অ্যাসোসিয়েশান

 

       ফিলাডেলফিয়া এবং এর আসে পাশে বসবাসরত বাঙালীরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কার্যক্রমকে সমন্বয় করতে একটি সংগঠন তৈরি করেছে। এই সংগঠনের কাজ হবে পশ্চিমা সংবাদপত্র থেকে আগ্রহী লোকজনদের জন্য তথ্য সরবরাহ এবং তথ্য পাইয়ে দেয়া। আরো জানার জন্য যোগাযোগ করুন, ৪৯, মার্লবোরো লেন, উইলিংবরো, এন.জে. ০৮০৪৬

.

                                  বাংলাদেশ লীগ সম্মেলন

বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকার বার্ষিক সম্মেলন নিউইয়র্কে ২৬ শে জুন ১৯৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। নিউইয়র্ক গ্রুপ ছাড়াও বাংলাদেশ লীগের যে অধ্যায় গুলো সম্মেলনে বর্ননা করা হয় সেগুলো হল, ওয়াশিংটন ডিসি, কেন্টাকি, ট্যেনেসি, এবং নর্থ ক্যারোলিনা। বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা লীগ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেলাওয়ার ভ্যালি এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশান অফ ওহাইও থেকে পর্যবেক্ষক ও উপস্থিত ছিল। সারাদিনব্যাপী সম্মেলনে অধ্যায়সমূহ এবং অন্যান্য বাংলাদেশের সংগঠন সমূহ থেকে রিপোর্ট ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য কাজ করা বিভিন্ন গ্রুপের কাজ এবং লীগের নির্বাহী কমিটির নির্বাচন সমন্বয়ের জন্য একটি সমন্বয়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

 

              বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা লীগ পশ্চিমা উপকুলের গ্রুপের সাথে সংযুক্তি  

       ডক্টর এফ.আর. খান, বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগের সভাপতি ২৫ শে জুন ১৯৭১ তারিখে স্যানফ্র্যান্সিস্কোতে অনুষ্ঠিত বে এরিয়া বাংলাদেশ এবং সমব্যাথীগন দের একটি মিটিং এ যোগদান করেন। লস অ্যাঞ্জেলেস গ্রুপের প্রতিনিধিরাও এই মিটিং এ উপস্থিত ছিলেন। ডক্টর খান বিডিএল এবং বাংলাদেশ জরুরী কল্যাণ আপীল(Bangladesh Emergency Welfare Appeal) এর সাংগঠনিক কাঠামো ব্যাখ্যা করেন এবং এসব সংগঠনের কার্যক্রম এবং ক্রিয়াকলাপ এর উপর একটি প্রতিবেদন দেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতে থাকা সকল বাংলাদেশী সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের উপর জোর দেন।

       বিডিএল এর সভাপতির সাথে দ্বিতীয় একটি সমন্বয়কারী মিটিং ১৮ জুলাই ১৯৭১ অনুষ্ঠিত হবে।

 

                           বাংলাদেশ মিশন থেকে, নিউইয়র্ক

       নিউইয়র্কের বাংলাদেশ মিশন থেকে মিস্টার এ.এইচ. মাহমুদ আলী আমাদের নিম্নোক্ত তথ্য দিয়েছেনঃ

১. বৈষম্য ও সংখ্যালঘুদের রক্ষায় নিয়োজিত সাব-কমিশন যেটি জাতিসংঘের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ২ অগাস্ট ১৯৭১ থেকে নিউইয়র্কে মিটিঙে বসবে। এই সাব-কমিশন বিশেষজ্ঞ লোকদের দ্বারা গঠিত তাই পুর্ব পাকিস্তানের মানবাধিকার দিকের পরিস্থিতি বিবেচনা ও তদন্ত করার জন্য জাতিসংঘের একটি সঠিক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। যদি কারো কাছে কোন তথ্য থাকে তাহলে বাংলাদেশ মিশনে একটি প্রতিলিপি সহ জাতিসংঘের মহাসচিবের নিকট নিম্নোক্ত ঠিকানায় চিঠি পাঠাতে পারেনঃ ১০ ইষ্ট ৩৯ স্ট্রীট, কক্ষ ১০০২এ, নিউইয়র্ক, ১০০১৬।

যারা ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ এরপর পুর্ব-বাংলা ছেড়ে গেছেন তারা বেসরকারী সংগঠনসমূহের সামনে যেমন “দ্যা ইন্টারন্যাশনাল লীগ ফর দ্যা রাইটস অফ ম্যান” যেটি জাতিসংঘের পরামর্শমূলক সহযোগী হিসেবে আছে, সাক্ষ্য দিতে পারেন। যাতে তাদের সাক্ষ্য সাব-কমিশনে উপস্থাপন করা যায়।

ইন্ডিয়া অথবা পুর্ব বাংলার উদ্বাস্তু দের থেকে পাওয়া চিঠি গুলো উপকারী হতে পারে।

যারা সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছুক, দয়া করে বাংলাদেশ মিশনকে লিখুন।

 

       ২. যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশী বৃত্তি বিসয়ক রাষ্ট্রপতির কমিটি সামনে সেপ্টেম্বরে মিটিং করবে। এই কমিটি বিদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য তহবিলের অনুমোদন নিয়ে সিধান্ত দিয়ে থাকে।

       যারা ২৫শে মার্চ, ১৯৭১ এর পর পুর্ব বাংলা ছেড়ে গেছেন তারা এই কমিটির সামনে সাক্ষ্য দিতে পারেন। যারা দিতে ইচ্ছুক তারা বাংলাদেশ মিশনকে চিঠি দিতে পারেন।

 

                                  প্রস্তাবিত পদক্ষেপসমূহ

১. সিনেটর এবং যতগুলো রাজ্যের প্রতিনিধি সম্ভব সবাইকে যত পারা যায় ফোন, চিঠি এবং টেলিগ্রাম করতে হবে। তাদের বলতে হবে তারা যেন আইন-সভায়(গ্যলাগার সংশোধনী) চার্চ-স্যাক্সবে অ্যমেন্ডমেন্ট এস-১৬৫৭ এবং অনুরূপ আইন কো-স্পন্সর করেন। প্রকাশ্য বিবৃতি দিতে তাদের প্ররোচিত করতে হবে এবং রাষ্ট্র বিভাগ এবং পেন্টাগনকে প্রশ্ন করতে হবে।

২. আপনার স্থানীয় নাগরিক গোষ্ঠীর সাথে কথা বলুন এবং তাদের জানান বাংলাদেশে দুর্যোগের ভয়াবহতা এবং আমরা বর্তমানে কিভাবে জড়িত আছি।

৩. তথ্যের জন্য সকল খবরের কাগজের প্রতি প্রতিদিন লক্ষ্য রাখুন। আপনার এলাকায় কাউকে রাখুন এবং একটি নির্দেশ উপদেশ সম্বাদাদি ফাইল রাখুন।

৪. আপনার স্থানীয় বাংলাদেশ গ্রুপ কে সমর্থন/সাহাজ্য করুন। ওয়াশিংটনের উপর চাপ প্রয়োগের মুল্য সম্পর্কে তাদের বোঝান।

৫. কংগ্রেসম্যানদের বোঝানোর মত বড় কাজে সরাসরি সাহায্য করার জন্য আপনার সবচেয়ে উপযুক্ত এবং ওয়াকিবহাল লোককে পাঠান।

Scroll to Top