২৭২. ২৫ নভেম্বর বিশ্বাসঘাতকতার পথ এখনো পরিহার করুণ

লাল কমল

<৬,২৭২,৪৬৫-৪৬৬>

 

শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
বিশ্বাসঘাতকতার পথ এখনও পরিহার করুন অভিযান

১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা

২৫ নভেম্বর, ১৯৭১

 

বিশ্বাসঘতকতার পথ এখনও পরিহার করুন

তা না হলে মৃত্যুর গ্লানিকর শাস্তিই হবে

একমাত্র অবশ্যম্ভাবী পরিণতি

 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমেদ গত ২৩শে নভেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে এক বেতার ভাষণে বলেছেন, মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ তীব্রতর পর্যায়ে উপনীত, যে কোন স্থানে যে কোন জায়গায় এমন কি শত্রুর নিরাপদ অবস্থানের ওপর মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালিয়ে তাকে বিমূঢ় করে দিতে পারে।

 

একদিকে রণক্ষেত্রে শত্রুরা যেমন মার খাচ্ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থনও ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ পশ্চিম পাকিস্তানও অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও রাজনৈতিক ভাঙনের মুখে। এ থেকে নিস্তার পাবার জন্য পাকিস্তান ভারতের সাথে যুদ্ধ বাধিয়ে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম থেকে পৃথিবীর দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নেবার চেষ্টা করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, এর দ্বারা বাংলাদেশের পাক জংগীশাহী সুনিশ্চিত পরাজয় এড়াতে পারবে না অথচ তাদের ভ্রান্তি, অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে, পরিণামে তাদের আত্মবিনাশ সুনিশ্চিত হবে।

 

পাকিস্তানের বিদেশী পৃষ্ঠপোষক যারা বাংলাদেশের সংগ্রামকে ভারত পাকিস্তান সংঘর্ষে চিহ্নিত করতে উদ্দ্যোগ নিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা একটি- তা হলো পূর্ণ স্বাধীনতা। সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের সংকল্পে, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আর স্বাধীনতা রক্ষার অপরাজেয় শক্তির মধ্য দিয়ে।

 

ভারতকে যথেষ্ট অর্থ সাহায্যের বিনিময়ে বাংলাদেশের শরণার্থীদের পাকাপাকিভাবে ভারতে বসবাসের ব্যবস্থা করার জন্য কোন একটি দেশের প্রস্তাব উল্লেখ করে বলেন, “এর দ্বারা পর্বতপ্রমান অবিচার অন্যায়কে বিনা বাক্যে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে গণহত্যা ও ব্যাপক বাস্তত্যাগের পথ প্রশস্ত করা হয়েছে।” তাদেরকে হুঁশিয়ার করে তাজউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, “শরর্ণাথী অস্থাবর সম্পত্তি নন যে অর্থের বিনিময়ে তাঁদেরকে হাত বদল করা যাবে।” তিনি সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, শরর্ণাথীরা সম্মান ও মর্যাদার সাথে জন্মগত অধিকার নিয়ে স্বদেশ ফিরে যাবেন, সেদিন প্রত্যাসন্ন। তাজউদ্দিন আহমদ প্রশ্ন করেন, উপমহাদেশে তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সন একটি বিশেষ দল পাঠিয়ে কি উদ্দেশ্য সাধন করতে চান? তার দেহসের কূটনীতিক ও আইন সভার সদস্যরা অবগত নন এমন কি তথ্য জানতে চান? ব্যাপক গণহত্যাকে যারা নিন্দা করেননি, তারা তথ্য সংগ্রাহক পাঠিয়ে কি ফল লাভ করতে চান, তিনি বুঝতে পারেন না। তিনি সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, “তাতে আমাদের সংকল্পের ব্যত্যয় হবে না, সে সংকল্প হল দেশকে শত্রুমুক্ত করে নিজেদের অভিপ্রেত সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা।”

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা লাভের দিনটি আজ নিকটতর হয়েছে, তাই আজ শত্রু সংহারের প্রতিজ্ঞা গ্রহণের সাথে সাথে শহীদের রক্তের মর্যাদার উপযুক্ত সমাজ গঠনে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।

 

তিনি আরও বলেন, “আমাদের সংগ্রাম সেদিনই সার্থক হবে যেদিন আমরা বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।”

 

বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমাঙ্কে পাকিস্তানী জংগী সরকার মুক্তি না দিলে বাংলাদেশ থেকে পাক সৈন্যদের নিষ্ক্রমণের পথ রুদ্ধ করে দেয়া হবে। আর তখনই ইয়াহিয়া ক্রুর সত্যের মুখোমুখি হবে বলে তিনি মনে করেন।

 

পরিশেষে বাংলাদেশের বীর শহীদ ও অকুতোভয় যোদ্ধা, সংগ্রামী জনগণকে যথাক্রমে শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তি সংগ্রামের বর্তমান পর্যায়কে চুড়ান্ত স্তরে নিয়ে চলুন।

 

যে সব রাজাকার, পুলিশ বা সরকার কর্মচারী বা অন্যান্য ব্যক্তি বিবেকের বিরুদ্ধে হানাদারদের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে তাদেরকে বিদ্রোহের সুযোগ গ্রহণ করবারও আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। যারা শত্রু পক্ষের সাথে স্বেচ্ছায় হাত মিলিয়েছে তাদের কে তিনি শেষবারের মত হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, বিশ্বাসঘতকতার পথ পরিহার কারুন, তা না হলে পরিণতি একটিই, তা হল গ্লানিকর মৃত্যু।

Scroll to Top