১৭ই সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবস পালন করার আহ্বান

<2.123.546-547>

শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৭ই সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবস পালন করার

আহবান

চারিটি ছাত্র সংগঠনের যৌথ

প্রচারপত্র

১৪ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭০

 

অমর ১৭ই সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবস পালন করুন

        সংগ্রামী ভাই ও বোনেরা,

          বছরান্তে ১৭ই সেপ্টেম্বরের রক্ত স্মৃতি বিজরিত মহান শিক্ষা দিবস ঘুরিয়া আসিতেছে । এই দিনে ১৯৬২ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বিরোধী আন্দোলন ছোট ভাই বাবুল, ওয়াজিউল্লাহ, মোস্তফা শহীদ হইয়াছিলেন । তাই প্রতি বৎসরই পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ পূর্ণ মর্যাদার সহিত ১৭ই সেপ্টেম্বর “শিক্ষা দিবস” পালন করিয়া আসিতেছে । শহীদের রক্ত স্মৃতিবিজড়িত এই দিবসে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ শহীদানের স্মৃতি শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করিবে এবং সেই সঙ্গে গণতান্ত্রিক, বিজ্ঞানসম্মত, ধর্মনিরপেক্ষ, গণমুখী ও সুলভ শিক্ষানীতি কায়েমের জন্য শপথ গ্রহণ করিবে । এই দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সহিত পালনের জন্য আমরা পূর্ব পাকিস্তানের সকল ছাত্র-ছাত্রী ভাইবোনদের প্রতি আবেদন জানাইতেছি ।

          পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজ ১৭ই সেপ্টেম্বরকে শিক্ষা দিবস হিসাবে সকল স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটির দিন ঘোষণার দাবী প্রথম হইতেই করিয়া আসিতেছি । কিন্তু জাতীয় শিক্ষা কমিশন রির্পোটের উদ্যোক্তা একনায়তত্ববাদী আইয়ুব সরকার শক্তির বলে ছাত্রদের এই দাবী অমান্য করিয়া আসিয়াছে এবং জাতীয় শিক্ষা কমিশন রির্পোট বাতিলেও অস্বীকৃতি জানাইয়াছে । ফলে প্রতি বৎসরই ছাত্রসমাজ বাধ্য হইয়াই ১৭ই সেপ্টেম্বর ধর্মঘট করিয়া আসিয়াছে এবং এইভাবে ও অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে ১৭ই সেপ্টেম্বর পালন করিয়াছে । কারণ ইহা খুবই পরিষ্কার কথা যে শিক্ষার দাবীতে সেদিনটিতে আমাদের তিনজন ভাই পুলিশ, ই,পি,আর বাহিনীর গুলিতে শহীদ হইয়াছিল, সেই দিবসে ছাত্রসমাজের পক্ষে ক্লাসে অংশগ্রহণ করিয়া শহীদানের স্মৃতির প্রতি অমর্যাদা প্রদর্শন করিতে না পারে ।

          বর্তমান দেশের অবস্থার অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে এবং একনায়কত্ববাদী আইয়ুব সরকার ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হইয়াছে । আইয়ুব সরকারের জাতীয় শিক্ষা কমিশন রির্পোট শিক্ষা জীবনে যে কিরূপ সংকট সৃষ্টি করিয়াছে এবং শিক্ষা সংস্কারের নামে আইয়ুবের শিক্ষানীতি যে একটি শিক্ষা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র ছিল বর্তমান সরকার উহা নীতিগত স্বীকৃতি দিয়াছেন । এবং আইয়ুবের শিক্ষা কমিশন রির্পোট ও কার্য্যতঃ বাতিল হইয়া গিয়াছে । বর্তমান সরকার একটি নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নে উদ্যোগী হইয়াছেন । অথচ এই কারণেই ১৯৬২ সালে আমাদের ভাইদের পুলিশ ও ই,পি,আর বাহিনীর গুলিতে প্রাণ বিসর্জন দিতে হইয়াছে । কাজেই বর্তমান অবস্থার পরিপেক্ষিতে বর্তমান শাসন কর্তৃপক্ষকে আমরা আহবান জানাইতেছি যে, ১৭ই সেপ্টেম্বরকে শিক্ষা দিবস উপলক্ষে হিসাবে ঘোষণা করুন এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারী ছুটি ঘোষণা করুন ।

          ছাত্র সমাজের প্রতি আমরা আবেদন জানাইতেছি যে, অমর ১৭ই সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসের সকল কর্মসূচীকে সাফল্যমন্ডিত করুন ।

          ঢাকা শহরের কর্মসূচীঃ

        ০ ১৫ই সেপ্টেম্বর সোমবার বিকাল ৪টায় মধুর ক্যান্টিনে সর্বদলীয় ছাত্রসভা ও কালোব্যাজ বিতরণ ।

          ০ ১৬ই সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রসভা এবং সন্ধ্যায় হলে ও হোস্টেলে সভা ও শপথ গ্রহণ ।

          ০ ১৭ই সেপ্টেম্বর বুধবার ভোরে প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন, যথাযোগ্য মর্যাদার সহিত শিক্ষা দিবস

                   পালন, বেলা ১১-৩০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়া কলা ভবনে সাধারণ ছাত্র সভা ।

 

 

শামসুদ্দোহা             তোফায়েল আহমেদ                   মোস্তফা জামাল হায়দার                     ইব্রাহীম খলিল

   সভাপতি,                            সভাপতি,                                     সভাপতি,                            সভাপতি,

পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন।            পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ   ।                   পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন ।                     জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন।

 

নূরুল ইসলাম              ,, আবদুর রব                 মাহবুব উল্লাহ                    ফখরুল ইসলাম

সাধারণ সম্পাদক,                     সাধারণ সম্পাদক,                        সাধারণ সম্পাদক,                 সাধারণ সম্পাদক,

 পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র                             পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ                  পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন            জাতীয় ছাত্র ইউনিয়ন ফেডারেশন

Scroll to Top