সাক্ষাৎকারঃ সিপাহী আফতাব হোসেন

সাক্ষাৎকারঃ সিপাহী আফতাব হোসেন

(বাংলা একাডেমির দলিলপত্র থেকে সংগৃহীত)

২৪১৯৭৪

 

ময়মনসিংহে থাকডোরে ইপিআর-এর ২ নং শাখা ছিল। উইং কমান্ডার ছিল ক্যাপ্টেন কমর আব্বাস (পঃ পাকিস্তানী), সুবেদার মেজর জিন্নত গুল (পাঠান), নায়েব সুবেদার খান বাহদুর, নায়েব সুবেদার হজরত খান, নায়েব সুবেদার রাজা বেলাল (পঃ পাকিস্তানী)।

 

২৬শে মার্চ  ইপিআরকে আর্মস-এম্যুনিশন দেয়া হয় অনির্দিষ্টকালের জন্য। এবং উইং হেডকোয়ার্টারের চারিদিকে পরিখা-মরিচা খনন করার নির্দেশ দেয়া হয়। ঐদিনই দুপুরের পর হাজার হাজার স্থানীয় ছাত্র-জনতা দা, লাঠি, বল্লম প্রভৃতি নিয়ে ময়মনসিংহের ইপআর হেডকোয়ার্টার ঘেরাও করার চেষ্টা করে। বাঙালি সুবেদার সি-কোম্পানী কমান্ডার ফরিদ আহমদ ছাত্র- জনতাকে উদ্দেশ্য করে মেগাফোনে বলেন যে, আপনারা চলে যান। উল্লেখ করা যেতে পারে যে ২য় বেঙ্গল রেজিমেন্টের সি কোম্পানী কমান্ডার মেজর নূরুল ইসলামের কোম্পানীও উইং হেডকোয়ার্টারের গ্রাউন্ডে তাঁবুর মধ্যে ছিল। মেজর নুরুল ইসলামও মাইকে জনতাকে চলে যেতে বলেছিলেন। কিছুক্ষণ পর জনতা চলে যায়।

 

২৭শে মার্চ  দুপুরের পর আমাদের উইং কমান্ডার কমর আব্বাস ইপিয়ারকে অফিসের সামনে মাঠের মধ্যে একত্রিত করেন। তারপর সমস্ত ইপিআর-এর উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। সামরিক আইনের কয়েকটি বিধিনিষেধ তিনি আমাদেরকে পড়ে শোনালেন এবং বলেন, এখন থেকে দুই জনের মধ্যে কোনো আলাপ-আলোচনা করা চলবে না, যদি কেউ করে আমি নিজে গুলি করে তাকে মেরে ফেলব। কোনো বাঙালি যদি কোনো অপপ্রচারে লিপ্ত হয় তাহলে ‘মেরা পহেলা গুলি উসকা সিনাকে সিনাছে নিকাল যায়েগি।’

 

২৭শে মার্চ  বিকেল বেলায় আমি, সিপাই ইদ্রিস রেডিওতে খবর শুনলাম যে ঢাকাতে পিলখানা, রাজারবাগ পাকিস্তানী সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে। তখন আমি সিপাহী নান্নুকে (১৪৩৬৮) বললাম যে ঢাকাতে পাকিস্তানী সৈন্যরা  বাঙালিদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে। আমাদের নিকট থেকে হয়ত অস্ত্রশস্ত্র জমা নিয়ে নিতে পারে। এক বিন্দু রক্ত থাকতে অস্ত্রসমর্পণ করব না বলে নান্নুকে বললাম। তার কিছুক্ষণ পর নায়েক সুবেদার খান বাহদুর (পাঠান) এবং পাকিস্তানী হাবিলদার আজিম আমাদের ৭ নং প্লাটুনে আসলেন এবং সয়ংক্রিয় সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র জমা দেবার নির্দেশ দেন এবং এরিয়ার বাইরে ডিউটিতে যেতে বলেন। তখন আমি আর নান্নু বললাম, দস্তখত করে হাতিয়ার এবং এম্যুনিশন নিয়েছি। এক বিন্দু রক্ত থাকতে তা জমা দেব না। তারপর তারা চলে যায়। সন্ধ্যার সময় খানা খাবার জন্য সবাইকে ৫ মিনিট সময় দেয়া হয়। কিন্তু আমি হাল্কা মেশিনগান নিয়ে বসে রইলাম এবং নান্নু ও অন্যান্য সবাই খানা খেতে চলে যায়। হাবিলদার আজিমের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়। আজিম আমাকে “তোম তো আজকাল সাচ্চা কমান্ডার বন গায়া।” বলে ঠাট্টা-পরিহাস করে। তখন আমি আজিমকে বলি যে, আমি বাঙালি ছেলে। এটা বাংলাদেশ। আমার হাতে হালকা মেশিনগান আছে। এক্ষুনি এক ব্রাশ মেরে দেব। তখন খান বাহাদুর আমাকে এই অজুহাতে বন্দী করার চেষ্টা করে। তারপর সিপাহী নান্নু খানা খেয়ে চলে আসে। দুইজন একত্রে হবার দরুন আমাকে বন্দি করতে পারে নাই। তারপর সন্ধ্যা থেকে রাত ৮/৯ টা পর্যন্ত পাকিস্তানীরা আমাদেরকে উইং হেডকোয়ার্টারের পেট্রল ডিউটি করায়। ডিউটি শেষে সমস্ত ইপিয়ারকে এক জায়গায় জমা করে। উইং কমান্ডার কমর আব্বাস এবং সুবেদার মেজর জিন্নাত গুল আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘জোয়ান লোগ রাত কো ডিউটি কাজ জরুরত নেহি হায়। তুম লোগ নিন্দ যাও।’ তারপর সবাই ব্যারাকে চলে যায়।

 

রাত প্রায় ১০ ঘটিকার সময় আমার ওস্তাদ লোকাস কুইয়া (খ্রীষ্টান) আমাদের ৭ নং প্লাটুনকে উদ্দেশ্য করে যার যার সেন্ট্রি ডিউটি আছে তাদেরকে দাঁড়াবার জন্য বলে। কিন্তু কেউ ডিউটিতে দাঁড়ালেন না। তখন আমি লোকাস কুইয়াকে বললাম আজ রাতে আমি ও নান্নু ডিউটি করব হালকা মেশিনগান নিয়ে। আমি আর নান্নু দুইজন দুই দরজায় ডিউটির জন্য দুইটা হালকা মেশিনগান নিয়ে দাঁড়ালাম। তার কিছুক্ষণ পর পাকিস্তানী হাবিলদার সিকিউরিটি নজির বাদশাহ এবং এম,টি,প্লাটুনের হাবিলদার গোলাম হায়দার (পাকিস্তানী) দুইটা চীনা স্টেনগান নিয়ে আমার প্লাটুন হাবিলদার আজিমকে গোপনে কি যেন নির্দেশ দিয়ে যায়।

 

আমাদের ব্যারাকের সামনে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ১৪ নং ডিভিশনের(যারা ইলেকশন ডিউটিতে ময়মনসিংহ এসেছিল) এক প্লাটুন সৈন্য তাঁবুর মধ্যে ছিল। রাত প্রায় সাড়ে বারটার সময় হঠাৎ একটা গুলির আওয়াজ শোনা গেল। তখন লাইনের ভেতরে যে কয়েকজন অবাঙালি ইপিয়ার ছিল তাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। নান্নু তখন সাথে সাথে তার হালকা মেশিনগান দিয়ে বারান্দা থেকে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের প্লাটুনের উপর ফায়ার আরম্ভ করে দেয়। বিহারী সিপাহী মমতাজের নিকট থেকে আমি একটি হালকা মেশিনগান উদ্ধার করি। এই গান বাঙালি সিপাহী (১৫২৭৯) হারুনকে দেই। হারুনকে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের  প্লাটুনের উপর ফায়ার করার জন্য নির্দেশ দিই। সিপাই মোস্তফা (১২৫২৭)-কে একটি হালকা মেশিনগান দিই দোতলা-তেতলা থেকে সিড়িঁর পথ বন্ধ করার জন্য । তখন আমি উপরতলার যত বাঙালি ইপিয়ার ছিল সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম, রাত্রি বেলায় বাঙালি হোক বা অবাঙালি হোক কেউ যেন নীচে নামার চেষ্টা না করে। যদি কেউ চেষ্টা করে তাকে গুলি করা হবে। তারপর পাঞ্জাব রেজিমেন্টের প্লাটুনের সাথে আমাদের সারারাত গুলি বিনিময় হয়। ভোর পর্যন্ত (২৮ এ মার্চ) পাঞ্জাব রেজিমেন্টের  সমস্ত প্লাটুনকে ধ্বংস করা হয়।

 

২৮ মার্চ সকালবেলা আমী হারুনকে নির্দেশ দিলাম মেগাফোন দিয়ে শ্লোগান দেয়ার জন্যঃ নারায়ে তকবির-আল্লাহু আকবর, জয় বাঙালির জয়। আরো বললাম সবাই এখন উপরতলা থেকে নিচে নামতে পারে।

 

তারপর আমি সিপাই নান্নু, সিপাই মোস্তফা, সিপাই হারুন এবং আরো কয়েকজন সিপাই নিয়ে সুবেদার মেজর জিন্নাত গুলের কোয়ার্টার আক্রমণ করি। সেই কোয়ার্টারে দু’জন হাবিলদারসহ চারজন পাকিস্তানী জেসিও ছিল। আমরা বাঙালিরা সবাই মিলে তাদের উপর ফায়ার করছিলাম। এমন সময় উইং কমান্ডা্র তার পার্টি নিয়ে পিছন দিক থেকে আমাদের উপর আক্রমণ করতে চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা দেকে ফেলি। উইং কমান্ডা্র এর পার্টির সাথে আমাদের গুলি বিনিময় হয়। তার পরই উইং কমান্ডা্র তার পার্টিসহ মুক্তাগাছার দিকে পালাতে চেষ্টা করে।

 

ময়মনসিংহ এবং টাঙ্গাইলের বাস রোড রেল লাইনের  ক্রসিংয়ে উইং কমান্ডা্র পার্টি পজিশন নেয়। তখন সিপাই নান্নু মিয়া ক্রুলিং করে ক্যাপ্টেন কমর আব্বাসের নিকট চলে যায়। কমর আব্বাস নান্নুকে দেখে ফেলে এবং চীনা স্টেনগান নিয়ে নান্নুর উপর ব্রাশ ফায়ার করে। নান্নু পজিশন নেয়াতে তার গায়ে গুলি লাগে নাই। ক্যাপ্টেন কমর আব্বাস আবার অন্য ম্যাগাজিন গানের মধ্যে লাগাবার চেষ্টা করে। তার আগেই নান্নু ক্যাপ্টেন কমর আব্বাসকে গুলি করে মেরে ফেলে। এইভাবে তার সাথের সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। তার সাথে সাথেই চারদিক থেকে জনতা এসে তাদের মৃতদেহ নিয়ে যায় এবং মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে প্রদর্শন করে ঘুরে বেড়ায়। তারপর  আমরা আবার সুবেদার মেজরর পার্টিকে আক্রমণ করি। ২৮শে মার্চ বিকেল পাঁচটার সময় তারা আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তারপর আমরা বাঙালি ইপিয়াররা সুবেদার মেজরের পার্টিকে ময়মনসিংহ জেলে পাঠাই।

 

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সি-কোম্পানী (২য় বেঙ্গল) অধিনায়ক মেজর নুরুল ইসলাম ও লেফটেন্যান্ট মান্নান রাত্রিবেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের কিনারে সিএণ্ডবি’র ডাকবাংলোতে ছিলেন। যখন গোলাগুলি আরম্ভ হয় তখন আমাদের উইং কমান্ডার কমর আব্বাসের পার্টি মেজর নুরুল ইসলামের উপর ফায়ার আরম্ভ করে দেয়। তখন তারা সেখান থেকে নদী সাঁতরিয়ে ওপারে চলে যান। বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোম্পানী গোলাগুলির সময় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং অনেকে শহরে চলে যায়। সামান্য কয়েকজন লোক  ময়মনসিংহে আমাদের এরিয়ার মধ্যে পজিশনে থাকে এবং সকাল বেলায় আমাদেরকে সাহায্য করে।

 

সমস্ত পশ্চিম পাকিস্তানী ইপিআরদের নিয়ন্ত্রণে আনার পর স্থানীয় জনসাধারণ আমাদের গোলাবারুদ,অস্ত্রশস্ত্র, জিনিসপত্র ময়মনসিংহ শহরের রাবেয়া স্কুলে নিয়ে যায় এবং আমাদের খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করে। ২৯শে মার্চ আমরা ময়মনসিংহ ডিফেন্স নিয়ে থাকি। ইতিমধ্যে মেজর শফিউল্লাহ(সি-ইন-সি,বর্তমানে) জয়দেবপুর থেকে তাঁর লোকজন নিয়ে টাঙ্গাইল হয়ে ময়মনসিংহ আসেন। ৩০শে মার্চ সমস্ত ইপিআর এবং বেঙ্গল রেজিমেন্টের লোকজন নিয়ে মেজর শফিউল্লাহ, ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান(ঢাকার রূপগঞ্জ থেকে এসে যোগ দিয়ে ইপিআর-এর চার্জ নেন) বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। মেজর শফিউল্লাহর নির্দেশে ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের নেতৃত্বে ট্রেনযোগে আমরা ঢাকার দিকে রওনা হই।

 

৩১শে মার্চ আমাদের দল ঢাকার নরসিংদী পৌছায়। নরসিংদী থেকে ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান কয়েকশত ইপিআর নিয়ে ঢাকা জেলার ভাঙ্গা বাজারের নিকটে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ডিফেন্স নেয় (১লা এপ্রিল); ২রা এপ্রিল আমাদের এক সেকশন(মুক্তিযুদ্ধের প্রথম গেরিলা পার্টি, ইপিআর-এর) নং ৩১৫৭ হাবিলদার আবদুল হাকিম, ১৪৩৬৮ সিপাহী নান্নু মিয়া, ১৫২৬৯ মোহাম্মদ আফতাব হোসেন, ১৫২৭৯ হারুনুর রশীদ, ১২৫২৭ নওয়াজ, ১৫৪৯২ মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, ১৭৩০৮ আবদুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ মফিজউদ্দিন, সাইদুর রহমান, আবদুল সাত্তার প্রমুখ ক্যাপ্টেন মতিয়ুর রহমানের নির্দেশে ঢাকা পৌছে। শার্ট-লুঙ্গি পরে আমরা একটা চীনা স্টেনগান, হালকা মেশিনগান পাঁচটা, বাকি ৩০৩ রাইফেল, অনেক গ্রেনেড ও এম্যুনিশনের বাক্স নিয়ে ২রা এপ্রিল রাত্রের বেলা ঢাকা শহরের নিকটে আমুলিয়া গ্রামে আসি।

 

যাত্রাবাড়ি প্রতিরোধঃ ৫ই এপ্রিল রাত আটটার সময় যাত্রাবাড়ি রোডে পাকসেনা বোঝাই একটা গাড়ীর উপর আক্রমণ চালাই। পুরো গাড়ী সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস হয়ে যায়। সাথে সাথে ঢাকা এবং ডেমরার দিক থেকে পাকসেনারা অনেকগুলি গাড়ী নিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সাথে প্লেন আসে এবং গোলাবর্ষণ করতে থাকে। আমরা আক্রমণ চালিয়েই সাথে সাথে আবার গ্রামে চলে যাই।

 

পাঁচদোনাতে প্রতিরোধঃ এপ্রিল মাসের ১১ তারিখ ঢাকার পাঁচদোনাতে আমাদের হেডকোয়ার্টার ডিফেন্স পাকিস্তানী সৈন্যরা আক্রমণ চালায়। এখানে তুমুল লড়াই চলে। এই লড়াই দু’দিন চলে। ক্যাপ্টেন মতিয়ার রহমান ও সুবেদার ফরিদের নেতৃত্বে যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধে ৪০০/৫০০ পাকসেনা নিহত হয়। ২০/২৫টা গাড়ী সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস হয়ে যায়। তার পরদিন ঢাকা সেনানিবাস থেকে বিপুল সৈন্য পাঁচদোনাতে আবার আমাদের উপর হামলা চালায় এবং  তিন দিক থেকে ঘেরাও করে ফেলে। হেলিকপ্টার দিয়ে পেছনে ছত্রীসৈন্য নামাতে থাকে। পাকসেনাদের প্রচণ্ড আক্রমণে টিকতে না পেরে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা ও ইপিআররা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ছত্রভঙ্গ হয়ে তারা ভারতের আগরতলাতে চলে যায়। সেখানে তারা ৩নং সেক্টরে যোগদান করে।

 

মনহরদীতে গেরিলা অপারেশনঃ আমাদের উপরে উল্লিখিত গেরিলা পার্টি ঢাকার মনোহরদী থানা এলাকায় যায়। প্রায় এক মাস মনোহরদীতে গেরিলা অপারেশন চালাবার পর এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকা জেলার পাটুলী গ্রামে সিরাজ মিয়ার বাড়িতে  হঠাৎ করে আমাদের পার্টির দু’জনের পায়ে গুলি লাগে (দুর্ঘটনায়)। এতে পুলিশের মোহাম্মদ আবদুল হক (গ্রাম-নিলক্ষ্ণীয়া, ডাকঘর-দুলালকান্দী থানা-রায়পুর ঢাকা) ও মুজাহিদ আবদুল সালাম (গ্রাম-দুলালকান্দী থানা রায়পুর) মরে যান।

 

কাটিয়াদী থানা অপারেশনঃ

১৯৭১ সনের মে মাসে আমার দল নিয়ে ময়মনসিংহ জেলার কাটিয়াদী থানা অপারেশন করি। এর আগের দিন সেনারা কাটিয়াদী থানার আশেপাশে ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছিল এবং গ্রামের বেশ কয়েকজন নিরীহ লোককে হত্যা করেছিল। তারা গ্রামে ঢুকে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগে লিপ্ত হয়েছিল। থানার বাঙালি পুলিশদের কেউ কেউ খানসেনাদের সাথে সহযোগিতা করেছিল। তারাও লুটতরাজে লিপ্ত ছিল। সিপাহী হারুনকে আমি রেকি করতে পাঠিয়েছিলাম। হারুন গিয়ে দেখে খানসেনারা লুটতরাজ-অগ্নিসংযোগ করে চলে গেছে। বাঙালি পুলিশ ও অফিসাররা লুটতরাজ করে এক ধনী হিন্দুবাড়ি থেকে টাকা-স্বর্ণ নিয়ে যাচ্ছে। সিপাহী হারুন তাদেরকে বাধা দেয় এবং বলে যে আপনারা বাঙালি হয়ে বাঙালির উপর অত্যাচার করছেন। তখন হারুনের উপর তারা ওসি’র নির্দেশে ৭ রাউণ্ড ফায়ার করে। সে কোনরকমে তার সাইকেল ফেলে চলে আসে। তখন ঐ দিন রাতেই আমরা কাটিয়াদী থানার উপর আক্রমণ করি। ভোরবেলায় বাঙালি ও-সি’ কে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘাতক পুলিশ পালিয়ে যায়। এখানে থেকে ১৭ টি রাইফেল ও প্রচুর গোলাবারুদ উদ্ধার করি।

 

-সিপাই মোঃ আফতাব হোসেন, নং ১৫২৬৯

বাংলাদেশে রাইফেলস, সেক্টর হেডকোয়ার্টার

কুটিবাড়ি, দিনাজপুর।

Scroll to Top