সাক্ষাৎকারঃ মেজর ওয়াকিউজ্জামান

<১০, ৮.৩, ২৭৮-২৮২>
সাক্ষাৎকারঃ মেজর ওয়াকিউজ্জামান

আমার পিতা ছিলেন এক্স আর্মি ম্যান। ২৪ তারিখের দিকে পাকিস্তান আর্মি আমাদের বাড়িতে আসে। সিলেটের বাসায় আমরা ছিলাম না, অন্য বাসায় ছিলাম। তারা বাসা তছনছ করে চলে গেল। তাদের উদ্দেশ্য হল আমার পিতাকে হত্যা করা এবং আমাদের উপর প্রতিশোধ নেওয়া। এরপর আমার এমন ঘৃণা জন্মে যে, আমি তাড়াতাড়ি মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগ দেই এবং তারপর ইন্ডিয়া চলে যাই।

প্রশ্নঃ ইন্ডিয়া আপনি কবে গেলেন?

উত্তরঃ ইন্ডিয়া আমি ক্রস করেছি ৩০ শে মার্চের দিকে।

প্রশ্নঃ ৩০ শে মার্চে আপনি ইন্ডিয়া গেলেন। ইন্ডিয়ার আপনি কোথায় গেলেন?

উত্তরঃ প্রথমে করিমগঞ্জে।

প্রশ্নঃ করিমগঞ্জে ত ফোর সেক্টর হেডকোয়ার্টার ছিল।

উত্তরঃ প্রথমে ছিল। যেখানে আমাদের রিক্রুটমেন্ট করা হয়েছিল ওটা ছিল সেটেলমেন্ত অফিস। ওর কাছে একটি স্কুল ছিল, সেখান থেকে আমরা ট্রেনিং নিয়েছিলাম। প্রথমে আমাদের যখন সিলেকশন করা হল সেটেলমেন্টে, ওখান থেকে আমাদের কলকলিঘাট নামক একটি জায়গা আছে সেখানে কিছুদিন ট্রেনিং চলে। যে ট্রেনিংটা হয়েছিল ওটা আমাদের বি এস এফ দিয়েছিল। আমাদের ভাল ট্রেনিং এর জন্য পরে ইন্ডিয়ান আর্মির কাছে পাঠানো হয়েছিল, সেটা ইন্দ্রনগরে ছিল।

প্রশ্নঃ ওটা কতদিনের ট্রেনিং ছিল?

উত্তরঃ ওখানে আমি এক মাস ছিলাম। কিন্তু আমি তিন সপ্তাহ ট্রেনিং করার পর আমাকে সিলেকশান করে নিয়ে আসল ইন্টেলিজেন্সের জন্য। আমাকে এক সপ্তাহ ট্রেনিং দেওয়া হয় ইন্টেলিজেন্সির উপর এবং তারপর আমাকে সিলেটে পাঠান হয় বিভিন্ন সংবাদ সংগ্রহের জন্য।

প্রশ্নঃ আপনি এরকম কটা টাস্ক করেছেন ?

উত্তরঃ প্রথমবার একটাই অপারেশান, এরকম একটা টাস্ক করতে এসেছি সিলেটে। আমার কাজটা ছিল কোন জায়গায় কি ধরনের ফোরসেস আছে সে সম্বন্ধে জানানো। সে ইনফরমেশনটা আমি দিয়ে দেই এবং দেয়ার পর উনারা আমাকে একটা টাস্ক দেন। আমার সাথে কুমিল্লার দুজন ছেলে ছিল, সিলেট টাউনের ভেতরে একটা এক্সপ্লোশন করার জন্য। কারন সিলেট টাউনটা আমি যখন দেখেছি তখন সিলেট টাউনটা একেবারে নরমাল ছিল। দেখলে মনে হত না যে, বাংলাদেশের লোক স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে বা সংগ্রহ করছে। এ রকম কোন পরিস্থিতি সিলেট টাউনে ছিল না।

প্রশ্নঃ ওটা কোন মাসে?

উত্তরঃ ওটা ছিল মে এর দিকে। আমি গিয়ে যখন এ কথাটা বললাম পরে আমাকে ইন্ডিয়ান ইকো সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ব্রিগেডিয়ার ওয়াটকে, তিনি আমাকে একটা মিশনের জন্য সিলেট পাঠালেন- তুমি গিয়ে একটা এক্সপ্লোশন কর তখন লোকে বুঝবে যে সংগ্রাম হচ্ছে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হবে যাতে আরো লোক আমাদের দিকে আসে এবং পাকিস্তান আর্মি এত ফ্রিলি যাতে মুভ করতে না পারে। যেদিন উনি বললেন তার পরের দিন আমরা রওনা হলাম।

প্রশ্নঃ আপনারা কজন  রওনা হলেন?

উত্তরঃ আমরা চারজন ছিলাম। তিনজন কুমিল্লার ছেলে ছিল আর আমি একা সিলেটের ছেলে ছিলাম। আমরা সিলেট টাউনে আসলাম তিনদিন হাঁটার পর।

প্রশ্নঃ আপনার সঙ্গে কে কে ছিল?

উত্তরঃ আমার সঙ্গে কুমিল্লার একজন ছেলে ছিল রেবতী নাম, আর একটা ছেলে ছিল ওর নাম হল সিদ্দিক, আর একজন ছিলেন উনি মারা গেছেন উনার নাম ছিল হাফিজ।

প্রশ্নঃ আপনাদের সাথে আর্মস কি ছিল?

উত্তর্ঃ আমাদের সাথে শুধু গ্রেনেড ও এক্সপ্লোসিভ ছিল। সিলেটে আমি তিনদিন হাঁটার পর। সিলেটে একদিন ছিলাম। সিলেট টাউনে আমাদের বাড়িটা খালি ছিল। ওটাতেই আমরা এক রাত্রি কাটালাম।

প্রশ্নঃ কোন লোক জানতে পারেনি?

উত্তরঃ না জানতে পারেনি। সিলেটের কয়েকজন লোক আমাকে দেখেছে কিন্তু দেখে সন্দেহ করেনি।কারন আমি কোন পলিটিক্যাল পার্টি বা কোন স্টুডেন্ট অরগাজাইসেশনএর মেম্বার ছিলাম না। এই জন্য ওরা আমাকে সন্দেহ করেনি। যেদিন পৌছলাম সেদিন রাত্রে আমরা সিলেট টাউন টা রেকি করলাম। এর পরের দিন রাত্রি আনুমানিক একটার সময় সিলেট টাউনের সেন্টারে সিলেট টাউনে নাইয়ার পুল নামক একটা জায়গায় আছে রামকৃষ্ণ মিশন। রামকৃষ্ণ মিশনের সামনে একটি ট্রান্সফরমার ছিল এবং টেলিফোনের একটি জংশন বক্স ছিল। ওই দুটা আমি সিলেক্ট করি। আমি দেখলাম টাউনের বাইরে করলে খুব একটা এফেক্ট হবে না, এটা টাউনের হার্ট, এখানে করা উচিত- তখন আমরা ওইখানে-

প্রশ্নঃ আচ্ছা ওখানে কোন গার্ড ছিল না?

উত্তরঃ ওখানে যখন আমরা প্রথম গেলাম তখন রাস্তায় আমাদের সাথে পুলিশের দেখা হল। পুলিশ টরচলাইট মেরে আমাদেরকে দেখে যখন পিছে সর চলে গেল তখন ওই রাস্তাতা বাদ দিয়ে অন্য রাস্তায় আসলাম। একটি পুকুর ছিল, পুকুরটার সাইডে কচুরিপানার ভিতর দিয়ে আসলাম এবং ওখানে গার্ড ছিল। গার্ডও ওখান থেকে ৫০/৬০ গজ দূরে একটি দোকানের আড়ালে ছিল। ওরা খেয়াল করেনি। তখন হঠাত বৃষ্টি শুরু হল। বৃষ্টির মধ্যে আমরা আমাদের এক্সপ্লোসিভ বাঁধলাম। আমরা চারজন ছিলাম। দুজন টেলিফোনে বাঁধলাম আর দুজন ট্রান্সফরমারে বাঁধলাম। টেলিফোনেরতা আমরা কমপ্লিট করতে পেরেছিলাম, ট্রান্সফরমারটায় করেছিলাম একটু তাড়াহুড়ার ভিতরে, ওটার এয়ার টাইট হতে পারেনি, এদিকে গাড়ির পেট্রোল আসছিল সেহেতু ওটা তাড়াতারি আমাদের এক্সপ্লশন করতে হল, ট্রান্সফরমার যেটা ছিল ওটা এক্সপ্লোশন হয়নি। টেলিফোনটা এক্সপ্লোশন হয়েছিল। আমরা টোটাল সময় ছিলাম ৩৬/৩৭ মিনিট। ওটা এক্সপ্লোশন হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে আমরা উইথড্র করে বেরিয়ে আসি এবং সিলেট টাউনের কুশিয়ারা নদী পার হয়ে আসি। ওরা আমাদের পারসু করেছিল কিন্তু ধরতে পারেনি। ওই দিন আমরা পুরা দিন হাঁটি। সন্ধ্যার দিকে আমরা বর্ডারের কাছে এসে পৌছি। সন্ধ্যার দিকে বর্ডারে ফিরে একটি গ্রামে আমরা রাত্রে থাকি। পরের দিন সকালে আমরা রওনা দেই। রওনা দেয়ার সময় আমাদের কিছু লোক ধরে ফেলেছিল। ওখানে কিছু লোক সন্দেহ করে এবং আমাদেরকে একটি ঘরে বন্ধ করা হয়েছিল। বন্ধ করে পাকিস্তান আর্মিকে খবর দেওয়া হয়েছিল। আমরা চারজন ছিলাম। আমি ওদেরকে বললাম যে, এখন পাকিস্তান আর্মি আসলেও আমরা মারা যাব আর এভাবেও আমরা মারা যাব। কিন্তু এখান থেকে বর্ডার মাত্র ৫ মাইল। আমরা শেষ চেষ্টা করি তখন আমরা একটু হৈ চৈ করলাম। ওদের একটা লোক আসল। তখন আমি বললাম দেখ আমাদের কাছে ২৪ টা গ্রেনেড আছে।আমরা যদি দুটা গ্রেনেড মারি তখন তোমাদের এখানে কিছু থাকবে না, বেশী ঝামেলা করো না। এই কথা বলে আমি একটা গ্রেনেড বাইরে থ্রো করলাম, থ্রো করতেই লোকজন সরে গেল। এই সুযোগেই আমরা বলতে গেলে পাঁচ মাইল দৌড়ে চলে এসেছি।

প্রশ্নঃ ওটাই কি সিলেট শহরে ফার্স্ট এক্সপ্লোশন?

উত্তরঃ ওটাই সিলেটের ফার্স্ট এক্সপ্লোশন, বলতে গেলে ওটাই লাস্ট এক্সপ্লোশন। এরপর কোন এক্সপ্লোশন সিলেট শহরে হয়নি। তিনদিনের মত লীছিল সেক্টর হেডকোয়ার্টারে পৌছাতে। তার আগে সিলেট টাউন থেকে লোক পালায়, বর্ডার ক্রস করে। যখন আমরা বর্ডার পৌঁছাই করিমগঞ্জে, তখন আমরা পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে সিভিলিয়ানরা যারা ছিল বাংলাদেশ আওয়ামি লীগের বা মুক্তিযোদ্ধারা, ওরা আমাদেরকে বলছিল তোমাদের একসঙ্গে অনেক লোক আসছে আমরা জানি তোমরা অমুক জায়গায় অপারেশন করছ । যে জায়গায় আমরা পৌঁছেছি সে জায়গার নামটা বলছিল। তখন ‘বাংলাদেশ’ নামে একটা পেপার বের হত। পেপারে দেখলাম খবরটা ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। হেডকোয়ার্টারে পৌঁছানোর পর আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেন এবং পরে জেনারেল দল ও জিজ্ঞসাবাদ করলেন- কেমনে কি করলাম, কোথায় থাকা হল।

প্রশ্নঃ নেক্সট টাস্ক আপনাকে কবে দেয়া হল?

উত্তরঃ এরপর আমি টাস্ক করতে পারিনি। কারণ যেদিন পৌছলাম তার একদিন পর কমিশনের ইন্টারভিউর জন্য ডাকল।

প্রশ্নঃ আচ্ছা, তারপর আপনি চলে গেলেন ট্রেনিং এ – মূর্তিতে। ওখানে কতদিন ট্রেনিং নেন?

উত্তরঃ আমি আবার ফোর সেক্টরে চলে আসি। এখানে আসার পর আমাদের আবার এক সপ্তাহের ট্রেনিং এ ইন্দ্রনগরে পাঠানো হল এবং ওই জায়গায় আমাদের টাস্ক দেয়া হল মহড়া হিসাবে। আমাদের সেক্টর কমান্ডার কতটুকু ট্রেনিং নিচ্ছে এবং কার কতটুকু ক্যাপাবিলিটি আছে সেটা জানার জন্য উনি কিছু টাস্ক নেন। ঐ টাস্ক টা নেয়ার পর আমরা আবার শিলচর চলে আসলাম। শিলচরে চলে আসার পর আমরা বিভিন্ন যে অফিসার চার পাঁচজন ছিলাম আমাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হল। আমাকে দেয়া হল কৈলাশ শহর সাব সেক্টরে সাব সেক্টর কমান্ডার হিসাবে। কারন আমার আগে যিনি ছিলেন উনি একজন ইন্ডিয়ান অফিসার ছিলেন। উনার নাম ছিল ক্যাপ্টেন হামিদ।

প্রশ্নঃ ওই সাব সেক্টরে জয়েন করার পর আপনার প্রথম টাস্ক কি ছিল?

উত্তরঃ এই সাব সেক্টরে জয়েন করার পর ওখানে কিছু এলাকা ছিল আমাদের ছেলেরা দখল করে মানে ডিফেন্স লাগায়। আমাকে টাস্ক দেওয়া এই ডিফেন্সে প্রায়ি এটাক আসত পাকিস্তান আর্মির। কারণ আমাদের জায়গাটা ছিল একটা খালের পাড়ে।

প্রশ্নঃ ওটা কি বাংলাদেশের মধ্যেই?

উত্তরঃ বাংলাদেশের মধ্যেই।

প্রশ্নঃ কৈলাশ শহর জায়গাটা কি বাংলাদেশের মধ্যেই?

উত্তরঃ না, কৈলাশ শহরটি একটি ইন্ডিয়ান টাউন। টাউনটার ঠিক বর্ডার টা হল বাংলাদেশের সাথে। এটা ঠিক শমশেরনগরের অপোজিটে। আর আমাদের ঠিক অপজিটে পাহাড়ের উপরে ছিল চাতলাপুর বিওপি।

প্রশ্নঃ আচ্ছা, আপনি যখন সাব সেক্টরে আসলেন তখন সাব সেক্টরের স্ট্রেংথ কত ছিল?

উত্তরঃ তখন আমার কাছে ৬ টা কোম্পানি ছিল। আমাকে প্রথম টাস্ক দেয়া হল ডিফেন্স টা অরগানাইজ করতে। কারণ বারবার ওর উপরে পাকিস্তান আর্মির এটাক আসছে। একবার ওরা আবার নিয়েও গিয়েছিল। তারপর আবার রিক্যাপচার করা হয়েছিল। আমি ডিফেন্স টা অরগানাইজ করলাম। কারন এটাই বলতে গেলে বাংলাদেশের একমাত্র জায়গা ছিল, তখনকার দিনে সিলেট সেক্তরে বংলাদেশের আর কোন জায়গা ছিল না। আমার সেক্টর কমান্ডার পার্সোনালি আমাকে বলতেন তুমি এই জায়গাটা কোনক্রমেই ছাড়বে না। ওটা আমার দায়িত্ব ছিল। এছাড়া বিভিন্ন অপারেশন করার জন্য মৌলভীবাজারের দিকে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হল। আমি প্রথম অপারেশন করি ওখান থেকে একটু আগে এওটি জায়গা আছে তার নাম হল মনু ব্রিজ, তার কাছে একটি স্কুল আছে, ঐ স্কুলের ওখানে আমরা পেট্রোলিং বসালাম।

প্রশ্নঃ ওটা কোন মাসে?

উত্তরঃ ওটা হল অক্টোবরের লাস্টের দিকে। পেট্রোলিং এ গেলাম। ট্রেনিং থেকে আসার পর আমি কিছু এক্সপ্লোসিভ নিয়েছিলাম। আমি আসার সময় ঐ এক্সপ্লোসিভ ও  একটা বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ নিয়ে গেছিলাম। ফ্ল্যাগ উপরে লাগালাম, নীচে বাঁশের ভিতরে এক্সপ্লোসিভ দিয়ে বাঁশের নীচে রিলিজ সুইচ দিয়ে ওখানে লাগিয়ে আসছিলাম। ভাবলাম সকালে যদি ওরা আসে বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ দেখলেই ওরা উঠাতে আসবে। উঠাতে আসলে আমার রিলিজ সুইচটা যদি রিলিজ হয়ে যায় ওখানে একটা এক্সপ্লশন হবে এবং হয়েছিলও। পরের দিন যখন ওদের পেট্রল এসে ফ্ল্যাগ টা নামাতে গেছে তখন এক্সপ্লোশন হয়। এটা ছিল আমার ফার্স্ট অপারেশন।

এর পরে আমাকে দেয়া হল একটি জিটারিং অপারেশন। এটা হবে অক্টোবরের ৩০ তারিখ। আমাদের সামনে যে ডিফেন্স টা ছিল ওদের এই ডিফেন্স থেকে খুব বেশী ফায়ারিং আসত।

প্রশ্নঃ ডিফেন্স টা কোথায়?

উত্তরঃ চাতলাপুর বিওপি। ওখান থেকে খুব বেশী ফায়ারিং আসত, আমাদের কন মুভমেন্ট হলে ফায়ারিং হত। ওদেরকে শায়েস্তা করার জন্য আমাকে জিটারিং অপারেশনে পাঠানো হল। আমার স্ট্রেংথ ছিল প্রায় এক প্লাটুন। এবং আর্টিলারি সাপোর্ট নিয়ে ওটা আমি রেইড করেছিলাম। ওদের দুই নাম্বার ও তিন নাম্বার প্লাটুন থেকে যে ফায়ার আসছিল ঐ ফায়ারের জন্য আমরা বেশিক্ষন টিকতে পারিনি। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের ভিতর ঐ জায়গাটা ছেড়ে দিতে হয়েছে। এরপরে আমরা বিভিন্ন পেট্রোলিং ও ছোটখাট এমবুশ করেছি রাজাকারদের উপরে। শমশেরনগর থেকে মনুর দিকে কুলাউড়ার দিকে যেতে যে রেললাইন টা পরে ওর ভিতরে একটা দুইটা এমবুশ করেছি। লাস্টে আমাকে টাস্ক দেয়া হয় নভেম্বরের ২৯ তারিখে। শমশেরনগরে এটাক হবে, সেই এটাকের জন্য শমশেরনগর ও মৌলভীবাজারের ভিতরের রাস্তা টা ব্লক করতে হইবে। শমশেরনগর স্টেশন থেকে প্রায় চার পাঁচ মাইল আগে একটা দীঘি আছে রাস্তার উপরে, ওই দীঘির উপরে আমাকে পজিশন নিতে বলা হল আমার সাথে ছিল ইন্ডিয়ান আর্মির একটা কম্পানী। আমরা ২ টা পর্যন্ত ওখানে পজিশন নিলাম। এবং পুরো দিনটা রোডটা কাট অফ করে রাখলাম। সকালের দিকে আমাদের অপারেশন ভাল ছিল। সন্ধ্যার দিকে আমাদের ওপর এত বেশী আর্টিলারি ফায়ারিং আসছিল যে, আমার লেফটে যে ইন্ডিয়ান কোম্পানি ছিল সে কোম্পানীটা উইথড্র করে চলে গেল। এবং সে আর্টিলারি শেলিং এ পরে খুব বেশী ক্যাজুয়েলটি হয়েছিল।

প্রশ্নঃ ওটা কোন জায়গায় এটাক করেছিলেন?

উতরঃ ওটা এটাক না আমাদের ডিফেন্স নিতে বলা হয়েছিল যাতে রোডটা কাট অফ করে দেওয়া হয়, রোডটা যাতে অরা ইউজ করতে না পারে। মৌলভিবাজার থেকে যাতে কোন রিফোরসমেন্ট শমশেরনগরে দিকে যেতে না পারে। আমরা ওখানে ছিলাম, সকাকের দিকে আমরা অপারেশন করেছিলাম। ওদের একটি গারি রিফোরস্মেন্ট আসছিল। আমাদের শেলিং এ ওই গাড়িটি নশট হয়ে যায় এবং প্রায় ৩০ জনের মত লোক মারা যায়। এরপরে শমশেরনগর থেকে যে সমস্ত লোক আমাদের দিকে আসতে চেষ্টা করেছিল তাদের উপর ফায়ার ওপেন করলে প্রায় ৬/৭ জন মারা যায়। এরপর ওরা ঐদিনের মত স্টপ করে এবং বিকেলের দিকে ওরা আমাদের উপর এত বেশী আর্টিলারি ফায়ারিং এবং মর্টার ফায়ারিং হেভি মর্টার ফায়ারিং শুরু করেছিল যে আমার বামদিকে ইন্ডিয়ান যে কোম্পানীটা ছিল তাদের পক্ষে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। তারা সেখান থেকে উইথড্র করে। কারন তাদের সেখানে খুব্বেশি ক্যাজুয়েলটি হয়েছিল। ঐদিন প্রায় ৩০/ ৪০ জনের মত ক্যাজুয়েলটি হয়েছিল। এর মধ্যে দুজন অফিসারো ছিল।

কৈলাশ শহরে আসার পর পরের দিন ২০ তারিখ সন্ধ্যার দিকে আমাকে পাথানো হল মনুতে যাবার জন্য। মনুতে পাকিস্তানী আর্মির একটা ঘাঁটি ছিল। মনু একটি রেলস্টেশন। মনু রিভারের উপর দুটো ব্রীজ আছে। একটা রেলওয়ে ব্রীজ আর একটা রবোরড ব্রীজ। যেটার সাথে শমশেরনগরের লিঙ্ক আছে কুলাগরের আর কুলাগরের লিঙ্ক আছে মৌলভীবাজারের সাথে।

প্রথম দিন গেলাম রাতে, আমরা পৌছুলাম ১২ টার দিকে। তিন টার দিকে ওদের পজিশন দেখতে গেলাম। পজিশন ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না। দু পারেই পজিশন ছিল।

প্রশ্নঃ ওটা কত তারিখে?

উত্তরঃ ওটা ডিসেম্বরের প্রথম তারিখে। ডিসেম্বর এক তারিখ রাতে আমরা এতাক করি আমরা মনু ক্যাপচার করি। আমাকে তারপর বলা হল মনু রিভার ফলো করে মৌলভীবাজারের দিকে যেতে এবং যাওয়ার সময় যাতে রাজনগর থানা এলাকা দেখে যাই। আমি মনু রিভার ফলো করে রাজনগর থানা এলাকায় গেলাম।

প্রশ্নঃ আপনি সমস্ত ট্রুপ্স নিয়ে চলে গেলেন?

উত্তরঃ সমস্ত ট্রুপ্স নিয়ে রাজনগর এলাকায় গেলাম। রাজনগর এলাকা আমরা মার্চ করলাম। দেখি ওদিকে কোন ফোরস নাই। তারপর আমরা ওদিকে মোউলভীবাজার আসলাম মৌলভীবাজার থেকে আমি ফেঞ্চুগঞ্জ পর্যন্ত আসছলিলাম। এর ভিতরে আমার সাথে আর কোন ফোরসের দেখা হয়নি। ইন দি মিন টাইম সারেন্ডার হয়ে যায়।

Scroll to Top