সংখ্যাগরিষ্ঠ ভিত্তিক সরকার, পাকিস্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ভুট্টোর ঘোষণা।

<2.198.747-748>

শিরোনাম সূত্র তারিখ
সংখ্যাগরিষ্ঠ ভিত্তিক সরকার পাকিস্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ভুট্টোর ঘোষণা দ্যা ডন ১৬ মার্চ, ১৯৭১

 

সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসন পাকিস্তানে প্রযোজ্য নয়

পিপিপি দেশ শাসনে উপেক্ষিত হতে পারে না

 মার্চ ১৫, ১৯৭১ এ জনাব জেড এ ভুট্টোর দেয়া প্রেস কনফারেন্সের রিপোর্ট

 

 

জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো, পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান, (করাচী) গতকাল বলেছেন যে বর্তমানে দেশে যে সাংবিধানিক  অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সেটা শুধু মাত্র পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রতিনিধিত্বে চললে তাতে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করা হয়েছে – অতএব এতে এই সমস্যার সমাধান হবেনা।

 

তিনি একটি প্রেস কনফারেন্স বলেন  যে, বর্তমানে যে  “সহজাত সংকট” উপরে এসে দাঁড়িয়েছে তা মীমাংসার ব্যাপারে তিনি ‘আশাহত’ ছিলেন না।

 

জনাব ভুট্টো বলেন যে, তিনি মার্শাল ল উঠিয়ে নেবার জন্য ও জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চেয়েছিলেন। “যত তাড়াতাড়ি মার্শাল ল’ প্রত্যাহার করা হবে ততই মঙ্গল”, উল্লেখ করে  তিনি বলেন এই  উদ্যেশ্যে এখনো কোন পরিকল্পনা মাফিক কিছু করা যায়নি। তিনি বলেন, আমার মনে হয় না উপস্থিত সঙ্কট মীমাংসা করতে আমাদের  কোন অসুবিধা হতে পারে।

 

তিনি একজন প্রশ্নকারীর উত্তরে বলেন, বর্তমান সঙ্কট নতুন নয়।  এটা অতীতে সব সময়ে ছিল কিন্তু  এখন এটি প্রধান সমস্যা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। তিনি বলেন, যে “অপসরণ” শব্দটি এই সঙ্কটের পর আর আসেনি বা যে  নতুন পররাষ্ট্রনীতি নেয়া হয়েছে তা এই সঙ্কটের পর আলোতে আসতে পারছে না।  সেগুলো সবই ছিল  বর্তমান সঙ্কটের আগে। তাই তিনি বলেন যে এখন “দুই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের” এই সংকটের মুখোমুখি  হয়ে এবং একটি দীর্ঘস্থায়ী শাসনতন্ত্র রচনা করার জন্য  ব্যাবস্থা নিতে হবে।

 

জনাব ভুট্টো বলেন, তার দল চেয়েছিল কেন্দ্রীয় ক্ষমতা দুই পাকিস্তানের  দুই প্রধান পার্টির কাছে হস্তান্তর করতে হবে। আমাদের অবস্থান ছিল যে, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল নিজ নিজ অংশের প্রতিনিধিত্ব করবে।

 

জনাব ভুট্টো বলেন  ‘দুই পাকিস্তান দুই প্রধানমন্ত্রী’ এই প্রস্তাব তিনি দিচ্ছেন না। বরং তিনি একটি একতাবদ্ধ পাকিস্তান চান। তিনি মনে করেন  সাধারণ জনগণ এই সহজ বিষয়টি বুঝলেও ক্ষোভের সাথে তিনি বলেন যে  তার এই অবস্থানকে সংবাদ মাধ্যমে অন্যভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। একটি স্বার্থান্বেষী দল বিশেষ উদ্যেশ্য নিয়ে না বোঝার ভাণ করে এই কাজে লিপ্ত যাদের মূল লক্ষ্য পাকিস্তানের একতা নষ্ট করা। ‘জনগণের সামনে তাদের মুখোশ এখন খুলে গেছে।’

 

জনাব ভুট্টো জানান,  অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা তার কথাকে একটি ভিন্ন অর্থ প্রদান করেছেন।  পিপিপি  এক্ষেত্রে একটি “সর্বজনবিদিত অবস্থান” নেবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

 

জিজ্ঞাসা করা হয়,  কিভাবে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সাথে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন। শেখ মুজিবুর রহমান সংখ্যালঘু নেতাদেরকেও  কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব দিয়েছেন।

 

ভুট্টো বলেন, তার দল পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল, – অতএব এটা পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করে। যদি এই দলটি কে বাদ দিয়ে কিছু করা হয় তাতে প্রমাণিত হবে যে পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইচ্ছা পরোক্ষভাবে উপেক্ষিত হয়েছে।

 

ভৌগলিক দূরত্ব

 

জনাব ভুট্টো পুনরায় বলেন যেহেতু পাকিস্তানের দুইটি অংশের মধ্যে  ভৌগোলিক  দূরত্ব আছে সেহেতু “সংখ্যাগরিষ্ঠের দ্বারা শাসন’’ এখানে প্রযোজ্য নয়। তিনি বলেন  সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে অবশ্যই পুরো দেশের কথা বিবেচনা করতে হবে বিশেষ করে অপর অংশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বিষয়টি।

 

 

জনাব ভুট্টো বলেন, এই উইং এর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে  পিপিপি “অবশ্যই উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তান এর প্রতিনিধিত্ব করবে।

 

পিপিপি নেতা গত জানুয়ারিতে ঢাকায় ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনায় তার  বিরুদ্ধে যে  অভিযোগ আনা হয়েছে সেটা অস্বীকার করেন।  তিনি বলেন  এটা মিথ্যা কথা এবং নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি এটি প্রচার করেছেন যারা তার ব্যাপারে “সবচেয়ে নির্দয়” অবস্থান নিয়েছেন।

 

তিনি বলেন, যদি যদি এটা সত্য হত তাহলে তো আমি সরাসরি ৬ দফা মেনে নিলেই পারতাম। এবং সেক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমান নিজেও খুশি থাকতেন নিজেকে সরকারযন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে পেরে।

 

জনাব ভুট্টো বলেন পিপিপি ও তার নেতারা ক্ষমতায় যাবার জন্য মরিয়া – এমনটি ভাবার প্রশ্নই ওঠেনা। বরং “জনগণই আমাদের ক্ষমতায় দেখতে চান যারা তাদের ভালোর জন্য কাজ করবে ও তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে।’

 

জনাব ভুট্টো বলেন, কেন্দ্রীয় ক্ষমতা উভয় উইংস এর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে দিতে হবে  এবং প্রাদেশিক ক্ষমতা প্রাদেশিক  সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে স্থানান্তরিত করা উচিৎ।

Scroll to Top