মাওলানা ভাসানীর নির্বাচনী ভাষণ

<2.129.562>

 

শিরোনাম সূত্র তারিখ
মওলানা ভাসানীর নির্বাচনী ভাষণ এপিপি ৫ নভেম্বর, ১৯৭০

 

নিম্নলিখিত প্রস্তাবটি জাতীয় আওয়ামী পার্টির প্রধান মাওলানা ভাসানীকর্তৃক পেশকৃত বিবৃতি যেটি ৫ ই নভেম্বর রেডিও ও টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়-

“ পরবর্তী নির্বাচনগুলোর মূল লক্ষ্যই হচ্ছে পাকিস্তানের জন্য সম্ভাব্য সর্বোৎকৃষ্ট সংবিধান গঠন করা। একটি সংবিধান দেশের হৃদপিণ্ডের মতো কাজ করে। একটি দেশ কখনোই সংবিধান ছাড়া পরিচালনা করা সম্ভব হয় না ঠিক যেমন একজন মানুষ তার হৃদপিণ্ড ছাড়া বাঁচতে পারে না। ”

 

“ আমি সবার কাছে আর্জি জানাই যেন নির্বাচন গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। সাধারণ জনগণ আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের নিকট আপনাদের ন্যায্য দাবীগুলো পেশ করুন, যেন সে দাবিগুলো যথাযথভাবে আদায় হয়। ”

 

“ আমি আরও আর্জি জানাই প্রার্থীদের কাছে যেন সম্পূর্ণ নির্বাচনিক প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবে সমাধা হয়, এমন কোন সমস্যার উদ্রেক যেন না ঘটে যাতে করে আমাদের দেশকে আরও দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়। এমন কোন কিছুই না হোক যাতে করে এক বিন্দু রক্ত না ঝরে এই দেশে এবং সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি নেয়া উচিত যেন নির্বাচন ভালোবাসা ও সম্প্রীতির পরিবেশের মাঝেই সম্পন্ন হয়। এবং জাতিগতভাবে শত বৈষম্য ও ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও দু দেশের বন্ধুত্ব বজায় থাকে। ”

 

“ পৃথিবীর সকল গণতান্ত্রিক দেশ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং আমাদের দেশের সকল আইন-কানুন মেনে ও মানাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে এটি অনুভব করা উচিত। ”

 

“ এমনকি আমি কিছুদিন আগে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে বলেওছিলাম যে- আপনি পূর্ব থেকেই হোন আর পশ্চিম থেকে, আপনার উচিত একটি সর্বসম্মত সংবিধান গঠনকল্পে দু অঞ্চলের রাজনৈতিক দল, সংখ্যালঘু, শ্রমিক সমিতি, কৃষক এবং ছাত্র নেতাদের ডেকে জাতীয় সম্মেলন করা। ”

“ ভালবাসি পাকিস্তান”

 

যদিও আমাদের মাঝে হাজারও বিভেদ রয়েছে তবুও সবার উচিত পাকিস্তানকে ভালোবাসা। আমাদের এমন একটি সংবিধান গঠন করতে হবে যেটি রাষ্ট্রের অখণ্ডতা নিশ্চিত করে, যেন কৃষক, শ্রমজীবী, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী, সাধারণ শিক্ষকদের দাবী আদায় হয়। ধনিক ও পুঁজিবাদী সমাজের অধিপতিরা যেন সুযোগ না পায়, তারাই যেন কেবলমাত্র গণমানুষের প্রতিনিধি না হয়।

 

“ আমি আগেও সুপারিশ করেছিলাম যে সংবিধানের প্রথম অংশ যদি জাতীয় সম্মেলন করে পারস্পারিক সমঝোতার ভিত্তিতে হয় তাহলে সংবিধানের বাকি অংশের কাজ সাংবিধানিক সভায় করাটা সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু সরকার আজ পর্যন্ত আমার সুপারিশ মঞ্জুর করে নি। ”

 

“ এই দেশের নাম পাকিস্তান, পৃথিবীর আর কোথাও এমন দেশ নেই। ”

যদি কেউ নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ঘুষ গ্রহন করে, এবং প্রতিনিধি নির্বাচন করার চেষ্টা করে তবে সে কখনোই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য আইন প্রনয়ন করে পারবে না। সে ব্যাক্তি যে নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত সে কখনোই অন্যের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। তারাই, যারা কালোবাজারি ও মানুষকে ব্যবহার করে দুর্নীতি করে, দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

 

তারা যারা বাইরের দেশগুলোর সাথে এবং এমনকি শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলোর সাথেও যোগাযোগ রাখছে তাদের দ্বারা পাকিস্তানের কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কখনো সম্ভব হবে না। সেজন্য এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে করে কালোবাজারিরা, মদ্যপ, ও যারা পাকিস্তানকে ভালবাসে না তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ না পায়।

 

এটি খুবই দুঃখের বিষয় যে আমাদের দেশে এটি একটি সংস্কৃতি হয়ে গেছে যে যারাই ক্ষমতায় আসে তারা সঠিকভাবে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না।

 

পাকিস্তানের জন্মলাভের পর থেকে আজ পর্যন্ত কোন সৎ,দরিদ্র পাকিস্তানি প্রতিনিধি হবার সুযোগ পর্যন্ত পায় নি। এর পেছনকার কারণও বেশ সুনিশ্চিত যে সরকার নির্বাচনে লড়াই করতে ইচ্ছুক এমন যে কাউকে ১০০০ রুপি নিরাপত্তার জন্য আমানত হিসেবে দেয়ার বাধ্যবাধকতা দিয়ে দিয়েছে। কৃষক,যারা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ শতাংশ তাদের খাওয়ার জন্য ভাত বা রুটিও নেই তাহলে তারা কিভাবে এই আমানতের টাকা জমা দেবে? সেজন্য, তারা পুরোপুরিভাবে বঞ্চিতই থেকে যায়।

 

শ্রমিকরা, যারা জনসংখ্যার দশ শতাংশ গঠন করে তারাও দুঃস্থভাবে জীবন যাপন করছে এবং তারা যে বেতন পায় তা তো বিশ্বেরই সর্বনিম্ন।

 

কৃষক ও শ্রমিকদের দুরাবস্থা দেশের দুই অংশেই একইরকম, এবং দুইয়েরই খাদ্য,শিক্ষার মতো মৌলিক সুবিধাগুলোর অভাব।

 

মোট জনসংখ্যার ৯৫% শতাংশই নিরক্ষর, এমনকি নিজের নামও সাক্ষর করতে পারে না। তাই আমি চেয়েছিলাম জাতীয় পরিষদের ৯৫% শতাংশ আসন কৃষক ও শ্রমিকদের জন্য রাখা হোক। একজন কৃষক কিংবা দিনমজুর কখনোই নির্বাচনে জমিদার, ব্যবসায়ী এবং দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারবে না। তাই, এমন এক নিয়ন্ত্রক সময়ে সে কখনোই পরিষদে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না। তারা না সংবিধান গঠনে না দ্রুত পট পরিবর্তনে কোন অবদান রাখতে পারবে।

 

পশ্চিম পাকিস্তানে জমিদারেরাই জমির মালিক এবং কৃষকরা কিছুই পাচ্ছে না। যদি একজন কৃষকের মৃত্যুও হয় সে এক টুকরো জমিও পায়না কবরের জন্য।

 

এমন পরিস্থিতিতে যদি সে জমিদারের বিপক্ষে বা নিজস্ব প্রতিনিধিকে নির্বাচনে দাঁড় করায় এবং জমিদারের বিপক্ষে ভোট দেয় তাহলে জমিদার তাকে শাস্তি দেবে এবং তার ভিটেবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করবে।

 

এটি একটি প্রাচীন প্রথা যে কৃষকদের জোর করে হলেও জমিদারদের পক্ষে থাকতে হয়। তাদের ক্ষেত্রে নিশ্চিত ধরে নেয়া হয় যে যেই তাদের জমিদার হোক না কেন তাকেই তাদের ভোট দিতে হবে। যদি আমরা তা না করি তাহলে আমাদের মরতে হবে না খেয়ে, আমাদের জোর করে মেরে ফেলা হবে আমাদের ক্ষুধার্ত পরিবারের সাথে।

 

এমন সময় কোন কৃষকই তাদের জমিদারদের বিপক্ষে গিয়ে ভোট দেবে না, নাই বা তারা তাদের জমিদারকে ছাড়া আর কাউকে সমর্থন দেবে। কারণ সবাই জানে যদি এর ব্যতয় হয় তাহলে পরবর্তীতে কি হবে।

 

এমনকি ব্রিটিশ শাসনের সময়ও ইন্দো-পাক উপমহাদেশে কিছু সিট মজুরদের জন্য সংরক্ষিত ছিল কিন্তু এরপর পাকিস্তানি মজুররা এই সুযোগটুকুও এখন আর পাচ্ছে না।

আমি সরকার ও সকল রাজনৈতিক দলের কাছে আল্লাহর দোহাই দিয়ে আর্জি জানাই যে এমন একটি সংবিধান রচনা করুন যা খাদ্য, শিক্ষা ও কৃষকদের সকল প্রকার মৌলিক অধিকার এবং জাতীয় পরিষদে জনসংখ্যার ভিত্তিতে কৃষক-শ্রমিকদের জন্য সংরক্ষিত সিট নিশ্চিত করে। শ্রমিকদের জন্য সর্বনিম্ন বেতন মাসিক ২৫০ টাকা করা উচিত।

 

আমাদের এই দেশে বড় বড় কর্মকর্তারা উচ্চবেতনভুক্ত, বিলাসবহুল জীবন-যাপন করেন এবং বড় বড় বাড়ির মালিক হন কিন্তু অন্যদিকে স্কুলশিক্ষক, অন্যান্য সরকারি কর্মচারী এবং শ্রমিকরা অভুক্ত থাকেন।

 

আপনারা আপনাদের সন্তানদের প্রাইমারি স্কুলের বেশি পড়াতেও পারেন না। উচ্চশিক্ষা এখন তাই বাধ্যতামূলক, ফ্রি এবং সহজলভ্য হওয়া উচিত। এই দাবিটি কার্যকর হওয়া উচিত।

 

আমি আর্জি জানাই যে যারা ভূমিহীন এবং কৃষিশ্রমিক তাদের মাঝে জমি ভাগাভাগি করে দেয়া হোক। সেই সব জমিদার যাদের ১০-১২ টি বাংলো এবং ছয় সন্তান আছে আয় নিয়ে তর্ক করার জন্য তাদের ভাগে কিছু কম পড়বে না যদি তাদের জমিদারি চলেও যায়। কিন্তু সেসব ভূমিহীন মানুষ যারা হাজার ছাড়িয়ে লাখে পৌঁছে গেছে এই দুইস্তরের মানুষদের কিভাবে মেলাবেন সেটা আপনাদেরই বোঝা উচিত।

 

যদি প্রাদেশিক দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে তা হলে সংবিধানও উপকারি হিসেবে বিবেচিত হবে না। কোন সরকারই স্থায়ী নয়, দরিদ্ররা অবহেলিত হতেই থাকবে, সমস্যাগুলো ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে, দ্বন্দ্ব আরও বাড়বে। এমতাবস্থায়, পুঁজিবাদীদের মদদপুষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কোন সরকার দুবছরের বেশি টিকে থাকতে পারবে না। এমন সরকার একবছরই টিকতে পারবে না। সরকার আবার বাধ্য হবে সেনাবাহিনীকে ডাকতে। তাই, এটা আবশ্যক যে কর্মজীবী শ্রেণীদের দাবিদাওয়া সংবিধানে পূর্ণরূপে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। কৃষক ও ছাত্রদের দাবিও সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।

 

শিক্ষা দরিদ্র মানুষদের জন্য এতটাই ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে যে তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারছে না। খরচ ও তুলনামূলকভাবে শতগুণ বেড়ে গেছে। তাই আমি সরকারের কাছে এবং ভবিষ্যৎ জনপ্রতিনিধিদের কাছে এমন একটি সংবিধান গঠন চাই যা কৃষক, শ্রমজীবী ও স্বল্পবেতনভুক্ত মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যদি তা না হয় তাহলে আপনাদের আবার সেনাবাহিনীকে ডাকতে হবে এবং সেনাবাহিনীর সাহায্যে সরকার চালাতে হবে। এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক বিষয় হবে।

 

 

 

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র

 

 

কায়েদ-ই-আজম বলে গিয়েছিলেন যে পাকিস্তানের সরকার গণতান্ত্রিক হবে। সেখানে কোন স্বৈরশাসন কিংবা সেনাবাহিনীর সরকার হবে না।

 

কায়েদ-ই-আজম এটাও বলেছিলেন যে পাকিস্তানের সরকার এই দেশের জনগণ দ্বারা পরিচালিত হবে। কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশার সমাপ্তি হবে। শ্রমিক-ছাত্রদের সম্মুখীন হওয়া বাধা বিপত্তিগুলো দূর হবে।

 

কায়েদ-ই-আজম বলেছিলেন যে পাকিস্তানের প্রতিটি নাগরিকের সমান সুযোগ থাকবে নিজ সন্তানকে যথাযথ শিক্ষা দেয়ার।

<2.129.565>

 
কিন্তু এটি পরিতাপের বিষয় যে ২৩ বছরের পরিক্রমায় বেশকিছু সরকারের আসা-যাওয়ার পরও এটা অনুভব করতে পারলো না যে ৯৫% শতাংশ মানুষ না জানে উর্দু, না বাংলা, না ইংরেজি, না আরবি। বিগত ২৩ বছরে এর জন্য কোন পদক্ষেপই নেয়া হয়নি।

এটি সরকারের দায়িত্ব জনগণকে শিক্ষিত করা যেন ভোটের মাহাত্ব্য প্রকাশ করা যায়। জনগণকে শেখাতে হবে কেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করা জরুরি। এটি যথাযথ শিক্ষা ও গণমাধ্যমে প্রচার করার মাধ্যমে জানানো উচিত।

মানুষকে বলা উচিত যে ভোটের অর্থ কি এবং একজন জনপ্রতিনিধি যখন ভোট চাইতে আসেন তখন তার মাঝে কি কি গুণাবলীর খোঁজ করা উচিত।

পরিপূর্ণ আস্থা

এটি আমার বিশ্বাস যে যতদিন সরকার জমিদার ও পুঁজিবাদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে ততদিন কৃষক এবং শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতির জন্য কিছুই হবে না। তাই আমি বিশ্বাস করি যে সমাজতন্ত্রেই দরিদ্রদের মুক্তি সম্ভব। কিন্তু এখন যখন নির্বাচন শুরু হয়ে গেছে তাই আমি জনগণ কে আহ্বান জানাবো যেন নির্বাচনে কোন কারচুপি না হয়।

দুর্নীতি বৃদ্ধির হার শতগুণ ছাড়িয়েছে। দুর্নীতিবাজ মানুষ তারা কলকারখানায় হোক, অথবা জমিদার হোক, অথবা ব্যবসায়ী বা কালোবাজারি হোক, তারা সকলে মিলে পাকিস্তানকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আপনাদের এসব মানুষদের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে হবে এবং টাকার জন্য ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি সকলে দুর্নীতিবাজ হয়ে যাই এবং কৃষকদের মাঝেও দুর্নীতির বিষ ঢুকে যায় তাহলে সমগ্র দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।

এমন অবস্থায় প্রতিকার এই যে জনগণকে এক হয়ে ভাবতে হবে ভবিষ্যৎ সংবিধান কেমনভাবে গঠন হতে হবে। যদি সম্ভব হয় তাহলে রাজনৈতিক নেতাদের দেখা করার সুযোগে সংবিধানের গঠনতন্ত্র নিয়ে আলোচনা হতে পারে। যদি পাকিস্তান টিকে থাকে তবে আমরা টিকে থাকবো। যদি পাকিস্তান ধ্বংস হয় তাহলে সবাই যার মাঝে কৃষক,শ্রমিক এবং জমিদার,পুঁজিবাদী,শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সকলেই আছে, ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই আপনাদের একতাবদ্ধ হয়ে এগুতে হবে দেশকে বহিরাগত ও অভ্যন্তরীণ শত্রুদের হাত থেকে বাঁচাতে হলে।

আপনাদের, তাই, একতাবদ্ধ হতে হবে বহিরাগত ও অভ্যন্তরীণ শত্রুদের হাত থেকে পাকিস্তানকে রক্ষা করতে, এবং চেষ্টা করতে হবে পাকিস্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, পাকিস্তানকে উন্নতশীল করতে, ঐক্যবদ্ধতাকে বাহবা দিতে ও ভাঙন ধরা থেকে বিরত রাখতে।

ঐক্যবদ্ধতা হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করি যেন তিনি সবাইকে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন একতাবদ্ধ হবার জন্য, সকল রাজনৈতিক দলের মাঝে সমঝোতার সৃষ্টি করে তাদের এক করে যেন তারা বহিরাগত শত্রুদের মোকাবেলা করতে পারে একসাথে। আমরা চারপাশের প্রতিটি কোণা-ঘুপচি থেকে শত্রু দ্বারা আবেষ্টিত যারা পাকিস্তানকে ধ্বংস করে দিতে চায়।

যদি পাকিস্তান টিকে থাকে তাহলে সব রাজনৈতিক দলও টিকে থাকবে। কেউ সাহসও করবেনা লক্ষ্যপূরণের জন্য ইচ্ছামতো রাজনৈতিক দল গঠনের যদি পাকিস্তান ভারতের সাথে মিশে যায় অথবা অন্য কোন আকৃতি নেয় বা সঙ্ঘ হয়ে যায়।

তাই এমতাবস্থায় আমাদের এক হয়ে পাকিস্তানকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ বানাতে হবে, যেন পাকিস্তান থেকে মদ্যপান দূর করা যায়, অযথা বাড়তি খরচ ছেঁটে ফেলা যায়, দুর্নীতিকে ঝেটিয়ে বিদায় করা যায়, কালোবাজারিকে গোঁড়া থেকে উৎখাত করা যায় এবং চাল, ডাল, মরিচ, ঘি এবং অন্যান্য ভোজ্য খাবার পাচার বন্ধ করা যায় যা ভারতে লাখ টাকায় বিক্রি হয়। আমাদের উচিত একতাবদ্ধ হয়ে খেলাপকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া। পাকিস্তানী হতে হলে পাকিস্তান জন্মভুমিকে ভালবাসতে হবে।
 

 

<2.129.566>

 

এদেশের ডাল, মরিচ, ঘি এবং অন্যান্য দৈনন্দিন উপাদান ভারতে লাখ রূপি সমমুল্যের হতে পারে। খেলাপিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। একজন সত্যিকারের পাকিস্তানী সদাস্বসর্বদা পাকিস্তানের প্রতি ভালোবাসা জ্ঞাপন করতে প্রস্তুত থাকবে।

আপিল

কিন্তু পাকিস্তানে বসবাস করে এদেশের ক্ষতি করতে চায় যারা বিশ্বাসঘাতক, অসাধু এবং পাকিস্তানের শত্র।

আমাদের প্রশাসন ব্যবস্থা অন্তত ৯৫ শতাংশ জোরদার করা উচিত যাতে করে কৃষক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর হয়।

ঈশ্বর আমাদের এ মহান কাজ করার ক্ষমতা ও সৎ সাহস দিন।

এবং ঈশ্বর যা নিষিদ্ধ করেছেন আমরা যেন তা ঘৃণা করতে করি। হে ‘ঈশ্বর আমাদের দিক নির্দেশনা দিন যেন এদেশের জনগণ স্বার্থপরতা ও ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত স্বার্থ উপেক্ষা করে পাকিস্তানের বৃহৎ স্বার্থে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারে, ব্যক্তিগত প্রান্ত এবং লোকসান উপেক্ষা করে জুয়া, দুর্নীতি, কালোবাজারি ও চোরাচালান পরিত্যাগ করতে সমর্থ হয়।

হে ঈশ্বর পাকিস্তানের ১৩ কোটি জনগণকে একত্রিত থেকে পাকিস্তানকে একটি শক্তিশালী ও উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার সুযোগ দিন।

পাকিস্তান বিরোধী প্রতিটি আগ্রাসনের বিপক্ষে এদেশের জনসাধারণ যুদ্ধ ঘোষণা করে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে মুক্ত চিন্তার সহিত আল্লাহ, মহানবী ও পাকিস্তানের নির্দেশনা অনুযায়ী বাস করবে।  পাকিস্তান জিন্দাবাদ।– এপিপি।

……………………………………………………………………………………………………………

Scroll to Top