মওলানা ভাসানির সাংবাদিক সাক্ষাৎকারের বিবরণ

<৪,২১১,৪৬৩>

অনুবাদকঃ  নন্দন দেব                            

শিরোনাম সূত্র তারিখ
২১১। মওলানা ভাসানির সাংবাদিক সাক্ষাৎকারের বিবরণ ন্যাশনাল হেরাল্ড (নয়াদিল্লি) ৩ জুন, ১৯৭১

                        

কোন রাজনৈতিক সমাধান নয়ঃ ভাসানি

মওলানা ভাসানির বক্তব্যের প্রতিবেদনঃ ২রা জুন, ১৯৭১ বাংলাদেশের কোন এক মুক্ত এলাকায় কিছু স্থানীয় এবং বিদেশী সংবাদদাতাদের সাথে।

অশীতিপর জাতীয় আওয়ামী পার্টি নেতা মউলানা  ভাসানি সম্পূর্ণভাবে পরিস্কার করেছেন যে , তারা  বাংলাদেশের বিষয়ে রাজনৈতিক নিষ্পত্তি জন্য কোন প্রকার চর্চা চান না ।  তিনি তত্সত্ত্বেও,  তার পূর্বের অবস্থান  পুনরাবৃত্তি করেন যে, বাংলাদেশের জনগনের ইচ্ছা স্বীকৃতি দেয়ার জন্য জাতিসঙ্ঘের সরাসরি তত্ত্বাবধানে গণভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে। ন্যাপ নেতা বাংলাদেশের কোন এক মুক্ত এলাকায় কিছু স্থানীয় এবং বিদেশী সংবাদদাতাদের সাথে আলাপ করছিল। তিনি জিজ্ঞেস করল, “হানাদারবাহিনির সাথে কিভাবে রাজনৈতিক নিষ্পত্তি হতে পারে যারা কিনা বাংলাদেশের  লক্ষাধিক অসহায় মানুষ মেরেছিল এবং একটি  আতঙ্কবাহিনিকে লেলিয়ে দিয়েছিল?”

মওলানা বলেন যে, তাদের মূল  লক্ষ্য হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানের দলবলকে শেষ করে দেয়া। তিনি বলেন, “আমরা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করবঃ আমরা হয় বিজয় অর্জন করব অন্যথায় প্রান হারাব” ।

কিছু দিন আগে দেয়া আওয়ামীলীগের অন্যান্য নেতাদের মত তিনিও একি মেজাজে কথা বললেন। সংবাদদাতাদের সাথে কথোপকথনের সময় তিনি চিনাদের প্রতারনার কথা টানলেন এবং বললেন তিনি কখনই কম্যুনিস্ট ছিলেন না ।

আন্তর্জাতিক  নিষ্ক্রিয়তার প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন ইহা অদ্ভুত যে বিশ্বের দলগুলো নিরব দর্শকের মত ব্যাবহার করছে যখন বাংলাদেশ তার মানুষের রক্তে রঞ্জিত । তিনি বলেন , বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন প্রার্থনার  জন্য এমন একটি দেশ বাকি নেই যার শরণাপন্ন তিনি হননি । তারা শুধু সমবেদনা প্রকাশ করেছিল।

লক্ষাধিক শরণার্থীকে খাদ্য এবং আশ্রয় দেয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি ন্যাপ নেতা তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি দুঃখবোধ করেন যে, সমাজতান্ত্রিক হোক বা সাম্রাজ্যবাদী হোক , কোন দেশই বাংলাদেশের মানুষের শোচনীয় দুরবস্থার নিমিত্তে কোন প্রকার নোট গ্রহণ করেন নি ।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন যে , ইসলামাবাদের সামরিক পরিসদের সাথে চিনাদের বন্ধুত্ব একটি অদ্ভুত রাজনীতি । তিনি আদৌ তার চীন পরিদর্শনের সম্ভাবনা অযোগ্য  বলে ঘোষণা করেন । দীর্ঘদিন ধরে চীনের মিত্র হিসেবে জনপ্রিয় মওলানা বলেন যে বেইজিং ইসলামাবাদকে সমর্থন করার ভুল একদিন বুঝতে পারবে।

মওলানা  এই পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ অথবা জাতীয় সরকার গঠনের বিরুদ্ধে , তার মতে এতে নেতৃত্ব সঙ্কট হতে পারে যা তাদের উদ্দেশ্যকে বিপদ্গ্রস্ত করবে। তিনি বলেন তিনি একটি সর্বদলীয় কমিটি পক্ষে যা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘায়িত যুদ্ধের জন্য  জনগনকে  সংহত করবে।

তিনি জোরালোভাবে বললেন যে, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ কখনোই একত্রে সাক্ষাত করতে পারবে না,  তিনি ভবিষ্যৎবানী করেন “এই ফাটল সম্পূর্ণ এবং চূড়ান্ত” । 

Scroll to Top