বৃটেনে প্রবাসী বাঙ্গালীদের আন্দোলন ও সংগঠন সম্পর্কে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর বক্তব্য

<৪, ৬২, ১১৩-১১৪>

অনুবাদকঃ জিহাদ

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৬২। বৃটেনে প্রবাসী বাঙ্গালীদের আন্দোলন ও সংগঠন সম্পর্কে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর বক্তব্য এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র ৩১ অক্টোবর, ১৯৭১

 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি

 

১১ গোরিং স্ট্রিট

লন্ডন ইসি৩

টেলিফোন: ০১-২৩৮ ৫৫২৬/ ৩৬২৩

জয় বাংলা

 

প্রবাসী বাঙালি ভাইবোনদের প্রতি

বিচারপতি চৌধুরীর আবেদন

 

 

প্রবাসী সংগ্রামী বাঙালি ভাইবোনেরা,

    আসসালামু আলায়কুম

    আপনারা যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন তার জন্য আমি গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও আমার নিজের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের পবিত্র মাটি থেকে শেষ পশ্চিম পাকিস্তানি বর্বর সৈন্যটি নিশ্চিহ্ন না হবে ততদিন পর্যন্ত আপনারা অটুট মনোবল নিয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অকুন্ঠ সমর্থন ও সক্রিয় সহযোগিতা করে যাবেন।

 

    যে কোন সংগ্রামেই প্রয়োজন বলিষ্ঠ সংগঠনের। গত ২৪শে এপ্রিল কভেণ্ট্রিতে অনুষ্ঠিত বাঙালি প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিনিধিবর্গের সম্মেলনে যে স্টিয়ারিং কমিটি গঠিত হয়েছিল, তা এতদিন পর্যন্ত বিলাত প্রবাসী বাঙালি ভাইবোনদের স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সংগঠন হিসেবে কাজ করে এসেছে। বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি ও স্টিয়ারিং কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে আমি এতদিন চেষ্টা করে এসেছি দেশের সংগে যোগাযোগ রক্ষা করে বিদেশে আমাদের আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধ ও জোরদার করে তুলতে। খোদার ফজলে আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতায় এই আন্দোলন সাফল্যের দিকে এগিয়ে গিয়েছে বলে বাংলাদেশ সরকার এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

 

    নির্বাচনে অনেক সময় দলাদলি বা ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। সেই কারণে আমি মনে করেছিলাম যে কাজের ভিতর দিয়ে সংগ্রামী ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হওয়ার পর কেন্দ্রীয় অ্যাকশন কাউন্সিলের নির্বাচন হলে ভালো হয়। তাই আমি সুগঠিত আন্দোলন গড়ে উঠবার পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপদেশ দেই। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে স্টিয়ারিং কমিটির বিশেষ উদ্বিগ্নতা সত্ত্বেও তাঁরা আমার উপদেশ অনুযায়ী এতদিন নির্বাচন থেকে বিরত থাকেন।

 

    বর্তমানে আমি অনুভব করছি যে, আন্দোলনের খাতিরে এখানকার কেন্দ্রীয় সংগঠনকে আরো বলিষ্ঠ করা প্রয়োজন। প্রথমত মাত্র কয়েকজন লোকের পক্ষে এতবড় আন্দোলনের গুরুদায়িত্ব পালন করে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন। দ্বিতীয়তঃ যত বেশি লোক আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করবেন আন্দোলন ততই জোরদার হবে বলে আমার বিশ্বাস। তাই পুরোপুরিভাবে গণভিত্তিক ও প্রতিনিধিত্বমূলক আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় অ্যাকশন কাউন্সিল গঠন করা খুবই দরকার। অতএব আমার উপদেশ অনুযায়ী স্টিয়ারিং কমিটি একটি CONVENTION বা সম্মেলন আহ্বানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য CONVENTION COMMITTEE গঠন করেছেন। CONVENTION COMMITTEE এ পর্যন্ত তিনটি বৈঠকে মিলিত হয়ে এই কাজে অনেক দূরে এগিয়ে গিয়েছেন। আমি আশা করছি সম্মেলন শীঘ্রই ডাকা হবে। এই সম্মেলনকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য আপনারা সূষ্ঠভাবে ও শৃংখলার সাথে এই ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন বলে আমি বিশ্বাস রাখি।

 

    আমরা এক জীবনমরণ যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছি এবং খোদার ফজলে যুদ্ধক্ষেত্র হতে খুবই উৎসাহজনক খবর আসছে। এই সময় একতা বজায় রাখা খুবই প্রয়োজন। এই ঐক্য কোনরকম ফাটল ধরলে শুধু আমাদের সংগ্রামের ক্ষতিই হবে না, তা পশ্চিম পাকিস্তানি শত্রুদের সপক্ষে এক বিরাট হাতিয়ার। তাই আপনাদের কাছে আমার বিনীত আরজ এই যে, দেশ ও দশের খাতিরে আপনারা এতদিন পর্যন্ত যে একটা নজায় রেখে এসেছেন তা অক্ষুণ্ন রাখবেন। জয় বাংলা।

আপনাদের খাদেম

(আবু সাঈদ চৌধুরী)

৩১/৮/৭১

Scroll to Top