ফ্রান্সাইজ কমিশনের রিপোর্ট

<2.34.196>

 

TERMS OF REFERENCE এ উল্লিখিত উল্লেখযোগ্য নির্দেশিকা সমূহ

৯। Terms of Reference এ প্রধানত তিনটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছেঃ (ক) ফ্রাঞ্চাইজের এর প্রকৃতি (খ) রাষ্ট্রপতি এবং সাংসদীয় সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতি (গ) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুই প্রদেশের ভোটারদের মধ্যেকার সমতা বিধান। ToR  এ দুই ধরনের ভোটাধিকার পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে- সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার পদ্ধতি এবং সীমাবদ্ধ ভোটাধিকার পদ্ধতি। সার্বজনীন ভোটাধিকার পদ্ধতির আওতায় পাকিস্তানের ২১ বছর বা তদুর্ধ সকল নাগরিককে ভোট প্রয়োগের অধিকার প্রদান করা হয়েছে, যদি না সে কোনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগে অক্ষম বলে সাব্যস্ত হয়। সীমাবদ্ধ ভোটাধিকার ব্যবস্থায় ভোটাধিকার নাগরিকদের সম্পত্তি ও শিক্ষা ইত্যাদি দ্বারা নির্ধারিত হয়। ToR অনুযায়ী নির্বাচন পদ্ধতিও দুটি ভাগে বিভক্ত- প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ। প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে প্রার্থীরা ভোতারদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। অপর পক্ষে পরোক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রথমে প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে প্রার্থী নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোটার নির্বাচিত হয়। প্রাথমিক নির্বাচনের মাধ্যমে মাধ্যমিক ভোটাররা নির্বাচিত হয়ে পরবর্তীতে মনোনীত প্রার্থী নির্বাচন করেন। সংবিধানে রাষ্ট্রপতি এবং জাতীয় ও প্রাদেশিক সাংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে পরোক্ষ নির্বাচনকে গুরুত্ব পপ্রদান করা হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী উভয় প্রদেশেই নির্বাচনী ভোটারদের সংখ্যা সমান থাকা বাঞ্জনীয়।  আবার ToR  অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচনী ভোটারদের সমতা যে কোন মুল্যে রক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয় গুলো হলঃ

ক) সার্বজনীন বা সীমাবদ্ধ- যে ভোটাধিকারই প্রয়োগ করা হোক না কেন, নির্বাচনী ভোটারদের ন্যূনতম যোগ্যতা কি হবে?

খ) রাষ্ট্রপতি বা সাংসদ নির্বাচনে প্রত্যক্ষ নাকি পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে? পরোক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচনী সভার গঠন প্রণালী কিরূপ হবে?

গ) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে উভয় প্রদেশের ভোটারদের মধ্যেকার সমতা কিভাবে রক্ষা করা হবে?

ভোটাধিকারের প্রকৃতি

১০। সর্বজনীন/ সীমাবদ্ধ প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারঃ সংবিধানের ধারা ১৫৭ মতে পাকিস্তানের ২১ বছর বয়সী বা তদূর্ধ্ব প্রতিটি সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন নাগরিক নির্বাচনী সভা গঠনের লক্ষ্যে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ ক্রতে পারেন। 

 

 

 

<2.34.197>

 

প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার নিয়ে বিতর্কের কোন অবকাশ নেই। তবে সার্বজনীন, নাকি সীমাবদ্ধ – কোন প্রকার ভোটাধিকার প্রয়োগ করা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়।ইন্দো-পাকিস্তান উপমহাদেশে সাধারণত সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার প্রচলিত রয়েছে। পূর্ববর্তী শাসনামলে ভোটাধিকারের সংজ্ঞা এখনকার চেয়ে ভিন্ন ছিল। ততকালীন সরকার জনগণের উপর নির্ভরশীল না থাকায় শাসক ও শাসিতদের মধ্যে আদর্শগত কিছু পার্থক্য ছিল। সুতরাং শিক্ষিত ও সম্পদশালী ব্যক্তিদের মতামতের গুরুত্ব বিধান করলেও সাধারণ জনগনের মতামত খুব বেশি গুরুত্বপুর্ণ ছিলনা। শিক্ষিত ও সম্পদশালী ব্যক্তিবর্গের উপরই সর্বপ্রথম ভোটাধিকার ন্যস্ত করা হয়েছিল, এবং সেসব অধিকার পরবর্তীতে আরও বৃদ্ধি করা হয়। সুতরাং প্রাক- স্বাধীনতা কালে সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রচলন ছিলনা।

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ভোটাধিকার গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা বহন করে। প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনে তাই ভোটাধিকারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

ভোটাধিকার প্রতিটি নাগরিকের মুল্যবান রাজনৈতিক অধিকার কারণ এর মাধ্যমেই জনগন তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা অর্জন করে। ভোটাধিকারই একমাত্র বিষয় যা একজন নাগরিককে একজন বিদেশি থেকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করে। তদুপরি, ভোটাধিকার লংঘন নাগরিকের সমতা ও গণতান্ত্রিক মতাদর্শের বিরুদ্ধাচারণ করে। একমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের মাধ্যমেই দেশের জনগণের মধ্যেকার সমতা বিধান ও গনতন্ত্রে জনগণের পূর্ন হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের আরও একটি সুবিধা হল ভোটার তালিকা প্রস্তুতিতে সল্প ব্যয়  কারণ এ পদ্ধতির আওতায় ভোটারদের যোগ্যতা বিচারের সম্ভাব্য খরচ হ্রাস পায়। তাছাড়াও সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার ব্যবস্থায় দেশের জনগণ রাজনৈতিক ভাবে সচেতন হয়ে উঠে যাহা রাজনৈতিক দলসমুহের উন্নয়নে একটি সুষ্ঠ ভুমিকা পালন করে।

<2.34.198>

 

সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় নেতিবাচক দিক হল সাধারণ জনগণ নিজেদের অশিক্ষা ও অজ্ঞতার ফলে পরিপুর্ণ দায়িত্বশীলতার সাথে তাদের ভোতাধিকার প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়না। এ ব্যবস্থায় ভোটারদের পরিসর এত বৃহৎ হয় যে প্রশাসন তা নিয়ন্ত্রণে অনেক সময় ব্যর্থ হয়। ভারতীয় ভোটাধিকার নিয়ন্ত্রণ কমিটি সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার ব্যবস্থা পর্যালোচনাকালে ৩০ বছর পূর্বেই উক্ত বিষয়াদি বিবেচনায় এনেছিলেন এবং এ পদ্ধতিতে সহমত জানান। কিন্তু প্রায়োগিক জটিলতার কারণে সে সময়ে এ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অশিক্ষার ন্যায় দারিদ্র্যও সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার ব্যবস্থার অন্তরায় বলে কমিটির নিকট পরিলক্ষিত হয়। ফলে সে সময়ে শুধুমাত্র যোগ্যতার বিচারে ভোটাধিকার প্রয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এমনকি অশিক্ষাও সে সময় খুব বড় কোন অন্তরায় হিসেবে বিবেচিত হয়নি।

তবে বর্তমানে  সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার ব্যবস্থার আওতায় গঠিত নির্বাচনী পরিসর ব্যবস্থাপনা  সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব। এমনকি পশ্চিম পাঞ্জাব এবং পূর্ব পাকিস্তানে  সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার ব্যবস্থার বিপক্ষে পরবর্তী বক্তব্য হল এ পদ্ধতির আওতায় রাজনৈতিক দলসমুহকে কার্যাবলির অধীনে পর্যালোচনা না করে জনগনকে মিথ্যা প্রচারণা দ্বারা ভাবাবেগের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহনে বাধ্য করতে সক্ষম। এর জ্বলন্ত উদাহরণ হল পুর্ব পাকিস্তানে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়। ঘটনার বিশ্লেষণে পরিলক্ষিত হয়, এ পরাজয়ের পেছনে নিহিত ছিল মুসলিম লীগ বিরোধী দলগুলোর ভাবাবেগপুর্ণ বক্তব্য, যা অশিক্ষিত জনগণকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহনে প্ররোচিত করে। সেসময়ের ক্ষমতাসীন দল মুসলিম লীগ বিভিন্ন কারণে তার জনপ্রিয়তা হারায়। ১৯৫৪ সালের পূর্বে পুর্বপাকিস্তানে প্রায় সাত বছর কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এ সময়ে অনুষ্ঠিতব্য অধিকাংশ নির্বাচনই বাতিল ঘোষিত হয়। মুসলিম লীগ তার ক্ষমতাসীন বছরগুলোতে একটি পরিপুর্ণ সংবিধান রচনায় ব্যর্থ হয়। এ সকল কারণে মুসলিম লীগ ধীরে ধীরে তার জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। সীমাবদ্ধ ভোটাধিকার ব্যবস্থাতেও এ আশংকা বিদ্যমান। কারণ ১৯৩৭ সালে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন অভিষেক কালে শিক্ষা, সম্পত্তি, কর, বয়স ও লিংগ ভেদে নাগরিকদের ভোটাধিকার যোগ্যতা ন্যূনতম পর্যায়ে হ্রাস করা হয়েছিল। ফলে অধিকাংশ নাগরিকই ভোটাধিকার প্রয়োগে সক্ষম হয়।

<2.34.199>

 

ভোটাধিকার এখনও সীমাবদ্ধ ছিল যদিও, প্রতি আসনে ভোটার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল।

…………এমনটা আশঙ্কা করা হচ্ছে যে  অপব্যাখ্যা এবং মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে অশিক্ষিত প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারদের আবেগ ও অনুভূতিকে ভুল পথে চালিত করা হচ্ছে। ভোটাধিকারের যোগ্যতা হ্রাসকরণের ফলে নিরক্ষর প্রাপ্তবয়স্ক ভোটার  সংখ্যা আরও বর্ধিত হবে যার ফলাফল নির্বাচনের জন্য নেতিবাচক বলে প্রমাণিত হতে পারে………..

প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের বিরোধী দল মনে করেন দরিদ্র ও নিরক্ষর জনসাধারণের ভোটাধিকারের সিদ্ধান্ত তাদের জমিদার, শিল্পপতি, এলাকার নেতা বা গোত্রপ্রধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে, ফলে সেসব জনগণ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ পাবেন না। তবে এ ধরনের ভোটাধিকারের মূল ইতিবাচক দিক হল এটি দরিদ্র ও নিরক্ষর জনসাধারণের একমাত্র কার্যকর অস্ত্র হিসেবে কাজ করবে যা জনগণের উপর থেকে ওইসব ব্যক্তির প্রভাব নিবারণ করবে এবং পারস্পারিক নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করবে, ফলে দুই শ্রেণীর মধ্যে সদিচ্ছা ও সম্প্রীতি গড়ে উঠবে।

……………………………………………………………………………………………………………

প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে সর্বশেষ যুক্তিটি ছিল যে যারা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পত্তি ভোগদখল করবেনা বা দেশের স্বার্থে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করেনা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেওয়া হবেনা। মূলত এ যুক্তিটিকে সমর্থনের কারণ ছিল যারা দেশের জন্য স্বার্থবান বলে প্রমাণিত হবেননা, তাঁরা যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার সাথে নিজদের ভোটাধিকার প্রয়োগে ব্যর্থ হবেন। প্রকৃতপক্ষে সম্পত্তি অধিকরণের সাথে দেশের স্বার্থে ভুমিকাশীলতার কোন প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। এসব ব্যক্তি জীবন্ধারণের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরোক্ষ কর প্রদান করে চলেছেন। তাছাড়া নাগরিক হিসেবে তাঁর স্বাধীনতা ও অধিকার একজন জমির মালিকের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। একজন নাগরিকের কাছে তাঁর ভোটাধিকারই তাঁর স্বাধীন মত প্রকাশের সর্বোচ্চ অধিকার। সাধারণ জনগণের এই অধিকার হরণ কেবল সাংবিধানিক প্রস্তাবণার বিরুদ্ধচ্চারণই নয়, বরং ইসলামিক সমতার মূল্যবোধের সাথেও সাংঘর্ষিক।

সুতরাং পূর্বোল্লিখিত আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে সকল বিশ্লেষণ এবং শর্ত প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের পক্ষেই সাক্ষ্য দেয়। সুতরাং রাষ্ট্রপতি এবং জাতীয় ও প্রাদেশিক প্রতিনিধি নির্বাচনে একুশ বছরের উর্দ্ধে, সুস্থ মানসিক ভারসাম্য সম্পন্ন ও আইনানুগভাবে উপযুক্ত সকল নাগরিককে ভোটাধিকার প্রদানের জন্য সুপারিশ করা হল।

নির্বাচনের ধরন- প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ

১১. আইনসভার প্রতিনিধিদের নির্বাচন পদ্ধতিঃ সর্বজনীন ভোটাধিকার সংবিধানে মঞ্জুর করা হলেও নির্বাচন পদ্ধতি প্রত্যক্ষ হবে নাকি পরোক্ষ- তা নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়ে গেছে। মতামতের ভিন্নতা থাকলেও সংবাদ মাধ্যমসমুহ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ পরিষদ প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিকে সমর্থন করেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত লাভ করে। প্রথমতঃ জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে সুনিশ্চিত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা উচিত, যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচন পদ্ধতি বাছাইয়ে সহায়তা করবে।

<2.34.200>

১৯০৯ সালের সংস্কারের পর থেকে এই দেশের মানুষ আংশিক সরাসরি এবং আংশিক পরোক্ষ নির্বাচন সম্পর্কে বেশ কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করে। কিন্তু ১৯১৯ এর সংস্কারের পর আইনসভা এবং স্থানীয় বিভিন্ন সংস্থায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনসমুহ মূলত প্রত্যক্ষ পদ্ধতিতে সংঘটির হয়। গত ৪০ বছরে মানুষ এইভাবে সরাসরি ভোটাধিকার ব্যবস্থায় অভ্যস্ত এবং তারা এ পর্যায়ে এই দীর্ঘকালস্থায়ী নির্বাচনী ব্যবস্থার কোন রদবদল স্বেচ্ছায় গ্রহণ নাও করতে পারে; বরং এ ধরনের পটপরিবর্তন তাদের মধ্যে অসন্তুষ্টি সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রবর্তিত কোন রাষ্ট্রই জাতীয় বা প্রাদেশিক পরিষদে প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি অনুসরণ করেনা। এ কারণে পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি দেশের জনগণের কাছে নির্দ্বিধায় গৃহীত নাও হতে পারে। প্রত্যক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক ভোটার নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণ করে আইনসভা প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পায়। এই ধরনের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ জনগণকে দেশের সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে সংযুক্ত হবার সুযোগ করে দেয় যা তাদের সন্তুষ্টিবিধান ও রাজনৈতিক শিক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

পরোক্ষ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ প্রত্যক্ষ ভোটারদের সংস্পর্শে আসতে সক্ষম হন না।  ফলে তাঁরা জনগণের আশা আকাংক্ষা সম্পর্কে তাঁর সচেতনতা বৃধি পায়না। আবার জনসাধারণও পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উপর পূর্ন আস্থা স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়। এ ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় নেতিবাচক দিক হল এটি জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা মন্দীভুত করে যা সরকারের ক্রমাগত উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। তাই পরোক্ষ নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সত্যিকার অর্থে প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বলা যায়না।

১৯৫৫ সালের নির্বাচনী সংস্কার কমিশনের এক রিপোর্টে বলা হয়, পশ্চিম পাঞ্জাবের ১৯৫০-৫১ সালের সাধারণ নির্বাচনে সরকারী কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ নির্বাচনকে পক্ষপাতদুষ্ট করে তুলেছিল। ঘটনার সত্যতা বিচারে বলা যায় এর পেছনে প্রত্যক্ষ নির্বাচনী পদ্ধতি বা সাধারণ ভোটাররা দায়ী ছিলেন না। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ – যে নির্বাচনী পদ্ধতিই গৃহীত হোক না কেন, সরকারী কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ যে কোন প্রক্রিয়াতেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই শুধুমাত্র এটির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নির্বাচনের মধ্যেকার মাপকাঠি হতে পারেনা।

সংখ্যাগরিষ্ঠ-একক ব্যালট ব্যবস্থা অনুযায়ী, একটি নির্বাচনে যে প্রতিনিধি সর্বোচ্চসংখ্যক ভোট লাভ করে সে প্রার্থী নির্বাচিত ঘোষিত হয়। তবে এ ভোটসংখ্যা মোট ভোটসংখ্যার তুলনায় সংখ্যালঘু হতে পারে।

<2.34.201>

 

উদাহরণস্বরূপ, যদি কোন নির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী যথাক্রমে ৩০% , ২৫%, ২০% ও ১৫% ভোট লাভ করেন তবে যে প্রার্থী ৩০% ভোট লাভ করেছেন তিনিই নির্বাচিত হবেন যদিও তা মোট ভোটের এক-তৃতীয়াংশের কম। এ পদ্ধতি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ – দুই পদ্ধতির জন্য উপযোগী হলেও পরোক্ষ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সংখ্যালঘু ভোটে প্রার্থী নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা প্রত্যক্ষ নির্বাচনী প্রক্রিয়া অপেক্ষা বেশি থাকে।

পরোক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থার স্বপক্ষে একমাত্র যুক্তি হল প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটাধিকার ব্যবস্থার আওতাধীন অধিকাংশ জনগণ অশিক্ষিত এবং রাজনীতি সম্পর্কে অজ্ঞ। ফলে প্রাদেশিক বা জাতীয় পরিষদ প্রার্থী নির্বাচনে তাদের মতামত নির্ভরযোগ্য নয়। সুতরাং পরিষদ প্রার্থী নির্বাচনে জ্ঞানী ও দায়িত্ববোধ সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের মতামত অধিক গ্রহনযোগ্য বলে প্রতীয়মান হয়। এই যুক্তি দৃশ্যত আকর্ষণীয় হলেও বাস্তবসম্মত নয়। শুধুমাত্র অশিক্ষার ভিত্তিতে সংবিধানের অধীনে কোন নাগরিককে প্রাথমিক বা অন্যান্য নির্বাচনে প্রার্থীতা গ্রহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। সুতরাং এসব অশিক্ষিত প্রতিনিধিরা এলাকায় তাঁদের সম্পত্তি ও প্রভাবশালীতার ভিত্তিতে প্রাথমিক নির্বাচনে মনোনীত হতে পারেন এবং মাধ্যমিক ভোটার হিসেবে পরিষদ সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচনী এলাকার ব্যপ্তি বিশাল হবে, ফলে ভোটারদের নৈকট্য হবে সীমিত। সুতরাং বিশাল পরিমাণ ভোটার নির্বাচন সম্পর্কে উদাসীন এমনকি বিরত থাকবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে  মৌলিক গণতন্ত্রের অধীনস্থ সর্বশেষ নির্বাচনে ৭০ শতাংশ নাগরিক তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেও সাধারণ প্রত্যক্ষ নির্বাচনে মাত্র ৪০ শতাংশ নাগরিক ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। একটি নির্বাচনে ভোট প্রয়োগের শতকরা হার বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে, তবে তা নির্বাচন কোন পদ্ধতির ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তার উপর নির্ভরশীল নয়। নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি মূলত নির্ভর করে ভোটারদের সচেতনতা, ভোটকেন্দ্র এবং ভোটারদের বাসস্থানের দূরত্ব এবং প্রার্থীদের প্রভাবিত করার ক্ষমতার উপর।১৯৪৫-৪৬ সালের নির্বাচনে গুরুত্বপুর্ণ কিছু বিষয় জড়িত থাকার কারণে ভোটারদের নিকট এ নির্বাচন বেশ গুরুত্ব বহন করেছিল। সে সময়ে সীমাবদ্ধ ভোটাধিকার এবং যোগাযোগের মাধ্যম ও পরিবহন সুবিধার অপর্যাপ্ততা সত্ত্বেও প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের সংখ্যা  ছিল বিরাট।নির্বাচন কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৪৫-৪৬ সালে অবিভক্ত পাঞ্জাবের সাধারণ নির্বাচনে প্রায় ৬০.৩২ শতাংশ নাগরিক ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিল। নিররাবনী কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে একই সালে অবিভক্ত বাংলার সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটারদের অংশগ্রহনের হার ছিল ২৮.৩ শতাংশ থেকে ৮০.৬ শতাংশের মধ্যে, যার গড় উপস্থিতি প্রায় ৫৪.৯ শতাংশ। এমনকি নির্বাচনী কমিশন প্রতিবেদনের ৬৪ নম্বর প্যারা অনুযায়ী ১৯৫০-১৯৫১ সালে পশ্চিম পাঞ্জাবের সাধারণ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ৫৩ থেকে ৬৫ শতাংশ। 

<2.34.202>

 

মৌলিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সর্বশেষ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ভোটারদের শতকরা হার অন্যান্য নির্বাচন অপেক্ষা বেশি হলেও জাতীয় পুনর্গঠন ব্যুরোর রিসার্চ অফিসারের প্রতিলিপি নং ৩৯০২ অনুযায়ী শিক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার পর্যাপ্ততা থাকা সত্ত্বেও ভোটারদের অংশগ্রহনের হার ছিল মাত্র ৩৫ শতাংশ যা সমগ্র পাকিস্তানে ভোটার অংশগ্রহনের হার ৫১ শতাংশে হ্রাস করে, এমনকি সে সময় পূর্ব পাকিস্তানে নির্বাচনে অংশগ্রহন হার ছিল ৫৬ শতাংশ। তবে মৌলিক গণতন্ত্র নির্বাচনে অংশগ্রহণের হার  উচ্চতর হওয়ার প্রধান কারণ ছিল নিজ এলাকায় ভোট কেন্দ্রের অবস্থান এবং ভোটারদের বাসস্থান ও ভোটকেন্দ্রের মধ্যেকার যুক্তিসঙ্গত দূরত্ব। প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে, একই পদ্ধতি অবলম্বন করলে ফলাফল ইতিবাচক হতে পারে। পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার পক্ষে আরও একটি যুক্তি- এটি কম ব্যয়বহুল এবং তত্ত্বাবধান করা সহজ। অপরপক্ষে দীর্ঘ প্রশাসনিক কার্যক্রম ও নির্বাচনী এলাকার ব্যাপকতার দরুণ প্রত্যক্ষ নির্বাচন অত্যন্ত ব্যয়বহুল তত্ত্বাবধান করা কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু দুটি সিস্টেমের বিস্তারিত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় পরোক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থায় সিস্টেমের এসব অনুমিত সুবিধা অবাস্তব। কারণ পরোক্ষ পদ্ধতিতে প্রথমে সমগ্র দেশব্যাপী প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নিম্নোক্ত কার্যাবলি সম্পন্ন করতে হয়ঃ

(ক) ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং ভোটার তালিকা ছাপানো

(খ) প্রারম্ভিক প্রকাশনা

(গ) আপত্তি এবং পরামর্শ শ্রবণের পর ভোটার তালিকা সংস্করণ

(ঘ) ভোটার তালিকা চুড়ান্ত সংশোধন ও প্রকাশনা

(ঙ) মনোনয়ন আমন্ত্রণ

(চ) মনোনয়নপত্র নীরিক্ষা ও মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি

(ছ) মনোনীত প্রার্থীর নাম প্রকাশ

(জ) ব্যালট পেপার, খাম এবং সংবিধিবদ্ধ ফরম ছাপানো

(ঝ) ব্যালট বাক্স তৈরী

(ঞ) ভোটকেন্দ্র স্থাপনা

(ট) নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশনা সম্পর্কিত অন্যান্য কার্যাবলি সম্পাদনা

প্রত্যক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থায়ও একই ধরণের দায়িত্ব পালন করতে হবে। উভয় নির্বাচনী ব্যবস্থার অধীনেই গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি, যেমন ভোটার তালিকা প্রস্তুতি ও প্রকাশনার পরিধি প্রায় সমান। প্রত্যেক ব্যবস্থার অধীনে প্রাথমিক তদন্ত ও পুনর্বিবেচনা সাপেক্ষে প্রায় চার কোটি পাকিস্তানি নাগরিকদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত, মুদ্রিত এবং প্রকাশিত করতে হবে। প্রতিটি ইউনিয়ন কাউন্সিলে গড়ে দশটি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে মাত্র একটি মেম্বার আসন রয়েছে।

<2.34.203>

 

প্রতিটি আসনের জন্য প্রতিযোগী সংখ্যা ৪ থেকে ৫ জন হতে পারে। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলোর উপস্থিতির ভিত্তিতে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিটি আসনের প্রতিযোগী সংখ্যা গড়ে পাঁচ জনের বেশি হবার সম্ভাবনা নেই। সুতরাং প্রতিযোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় তালিকার প্রতিলিপি এবং ভোটার তালিকা প্রস্তুতি ও ছাপানোর কাজে নিযুক্ত লোকবল প্রায় সমসংখ্যক হবে। সর্বশেষ মৌলিক গণতান্ত্রিক নির্বাচন স্বল্প ব্যয়েই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর প্রধান কারণ উক্ত নির্বাচনে ১৯৫৭ সালের পরিষদ নির্বাচনের নিমিত্তে প্রস্তুতকৃত নির্বাচনী তালিকাটি প্রয়োজনীয় সমন্বয় এবং মুদ্রণ করে ব্যবহার করা হয়েছিল। ফলে নতুন ভোটার তালিকা মুদ্রণ করার প্রয়োজন ছিলনা। তাছাড়া নির্বাচনী কমিশনের পরিবর্তে নির্বাচনী প্রার্থীরা ব্যালট বাক্স সরবরাহ করেছিল। তবে পরবর্তীতে জনসাধারণের সমালোচনার মুখোমুখি হবার ফলে পুর্ববর্তী অদ্ধতি গুলো সম্পাদন করা সম্ভব ছিলনা। সংবিধানের ১৫৩ নং ধারা অনুযায়ী পরোক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পূর্ণ দায়িত্ব নির্বাচনী কমিশনের উপর ন্যস্ত। পরোক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থায় প্রাথমিক নির্বাচন সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সকল নির্বাচনী কার্যক্রম অতি সতর্কতার সাথে সংবিধানে বর্ণিত আইন মোতাবেক সম্পন্ন করা নির্বাচনী কমিশনের প্রধাণ দায়িত্ব। প্রত্যক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থাতেও অনুরূপ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।  তাছাড়াও নির্বাচনী তালিকা ও ভোটপত্র প্রস্তুতকরণ, ভোটবাক্স সরবরাহ এবং ভোটপত্রের গোপনীয়তা রক্ষা করা জরুরি। সুতরাং সার্বিক দিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্ক নির্বাচনী ব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ নির্বাচনী প্রক্রিয়া অপেক্ষা পরোক্ষ নির্বাচনী প্রক্রিয়াটি তুলনামূলকভাবে ব্যয়সাপেক্ষ।

প্রত্যক্ষ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ যুক্তিটি হল এ প্রক্রিয়ায় অসাধুতার সম্ভাবনা রয়েছে। ইয়াহ্র সত্যতা বিচারের সাপেক্ষে বলা যায়, পরোক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থাও এ সম্ভাবনার আওতামুক্ত নয়। এ সমস্যার প্রতিকার নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যানের মধ্যে নিহিত নেই। বরং সমস্যার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যেন কারুর পক্ষে অসাধুতা অবলম্বন করা কঠিন হয়।

সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সরাসরি নির্বাচন একটি বিতর্কিত বিষয় এবং এর পক্ষে ও বিপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি রয়েছে। উভয় নির্বাচনী ব্যবস্থার সুবিধা ও অসুবিধা পর্যালোচনা সাপেক্ষে বলা যায় দেশে বিদ্যমান অশিক্ষা ও পশ্চাৎপদতা সত্ত্বেও প্রত্যক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থা পরোক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থা অপেক্ষা অধিকতর গ্রহুনযোগ্য। সুতরাং জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের প্রতিনিধি নির্বাচনে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ পদ্ধতি অবলম্বনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সুপারিশ করা হল।

সর্বসম্মত সুপারিশের ভিত্তিতে হলেও উক্ত উপসংহার থেকে দুটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণে উপনিত হওয়া যায় যা বিশেষ দ্রষ্টব্য আকারে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

<2.34.204-207>

 

১২। রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনের পদ্ধতিঃ রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন পদ্ধতি কি হবে সেই আলোচনায় আসলে আমরা দেখতে পাই যে এই বিষয়টি ভিন্নতার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। একটি বৃহৎ অংশ ইলেক্ট্ররাল কলেজের মাধ্যমে পরোক্ষ পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে। অপর অংশটি যা অত বৃহৎ নয় তারা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পক্ষে। বিধান সভা সদস্যদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরোক্ষ পদ্ধতির বিপক্ষে এবং সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে যে সব যুক্তি প্রদর্শিত হয়েছে সেই যুক্তি সমুহ একটি ব্যাতিক্রম ছাড়া একই রকম জোরের সাথে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে দেখা যায়। ব্যাতিক্রমটি হচ্ছে রাষ্ট্রপতির নির্বাচকদের বিশাল সংখ্যা এবং সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কারনের তাদের সম্ভবত সেভাবে দূষিত করা সম্ভব নয় যেভাবে পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বিধান সভার সদস্যদের দুষিত করা সম্ভব। তাছাড়া রাষ্ট্রপতি পদপ্রাথিরা যাদের উচ্চ মর্যাদা ও রাষ্ট্রের অখন্ডতার প্রতিক হিসাবে আশা করা হয় তাদের পক্ষে দুর্নীতি অবলম্বন করা খুবই দুঃখজনক/ সম্ভাবনা খুবই কম পরোক্ষ পদ্ধতির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের  অবশ্যই একটি ক্ষতিপূরণমূলক বৈশিষ্ট্য । রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির বিপক্ষে এবং সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে অন্যান্য সাধারন কারন এর বাহিরেও সরাসরি নির্বাচন সমর্থন করার পিছনে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারন বিদ্যামান।   সংবিধানের অধিনে রাষ্ট্রপতির পদটি খুবই মর্যাদাপূর্ণ।  রাষ্ট্র প্রধান এবং রাষ্ট্রের; প্রধান নির্বাহী হিসাবে তিনি বিস্তৃত ক্ষমতার অধিকারি এবং তাকে দেশের শাসন ব্যবস্থা ও প্রশাসনের জন্য অনেক গুরু দায়িত্ব বহন করতে হবে।  তিনি এবং তার কাউন্সিল মন্ত্রীগণ জাতীয় পরিষদের কাছে দায়বদ্ধ নন এবং মন্ত্রীগণ রাষ্ট্রপতিকে খুশি রাখার মাধ্যমে তাদের স্বীয় পদ টিকিয়ে রাখবেন। জাতীয় পরিষদ কে  ভেঙ্গে  দেয়ার অবাধ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। প্রাদেশিক পরিষদের বিলুপ্তিও তার সম্মতি সাপেক্ষে হয়ে থাকে।  জাতীয় পরিষদের সদস্যদের মোট ভোটের দুই তৃতীয়াংশ ভোটে পাস হওয়া বিলেও তিনি সম্মতি দিতে অস্বিকার করতে পারেন এবং বিলটি পাস করা উচিৎ কিনা বা তার  সম্মতি দেয়া উচিত কিনা একটি সিদ্ধান্তের জন্য গণভোটের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে পাঠাতে পারেন।  স্বীয় পদ হতে রাষ্ট্রপতিকে অপসরণ সংক্রান্ত বিধান এতই কঠিন যে এটা প্রয়োগ করা খুবই দুরুহ ব্যাপার।  এই ধরনের অনন্য অবস্থান এবং ক্ষমতার জন্য এটা খুবই জরুরি যে রাষ্ট্রপতির উচিৎ জনগণের আস্থা এবং সম্মতি সহকারে তাদের পরিচালনা করা এবং এই ধরনের আস্থা ও সম্মতি সরাসরি নির্বাচন ব্যাতিরেকে তৈরি হতে পারে না। সরাসরি পদ্ধতির মাধ্যমে সব প্রাপ্তবয়স্কদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহনের সন্তুষ্টি থাকা উচিৎ এবং জনসাধারণ চেতনা, সম্মতি একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারকে সঠিক ও কার্যকরী করার জন্য অপরিহার্য, যা রাষ্ট্রপতিকে জাতীয় নেতা হিসেবে খুব উচ্চ সম্ভ্রমের অবস্থানে রাখবে।  এইটা অস্বিকার করা যাবে না যে জাতীয় পরিষদ একটি তুলনামুলক দুর্বল প্রতিনিধি সংস্থা।  কমিশনের হাতে যে বিশাল তথ্য প্রমানাদি আছে সেই অনুসারে বলা যায় যে যদি একটি তুলনামুলক দুর্বল জাতীয় পরিষদ প্রাপ্ত বয়স্কদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয় তাহলে এটা আরো আকাঙ্ক্ষিত যে রাষ্ট্রপতি যিনি একটি অন্যন্য অবস্থান এর অধিকারি এবং বিস্তৃত ক্ষমতার অধিকারি তাকে অবশ্যই একই ভাবে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হওয়া উচিৎ।  অতএব রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কোনভাবেই পরিষদের সদস্য নির্বাচনের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় । প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সরাসরি নির্বাচনের আরো উপযুক্ত পদ্ধতি এই অভিমত শুধুমাত্র আমাদের দুই জনের নয়।  যারা পরোক্ষ নির্বাচনের পক্ষে রেকর্ডের জন্য তাদের কারনসমূহ আলাদা নোটে লিপিবদ্ধ করা হল।

 

১৩। রাষ্ট্রপতি নির্বাচকদের মধ্যে সমতাঃ সরাসরি পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুই অংশের ভোটারদের মধ্যে কিভাবে সমতা বজায় রাখা যায় তা এখন বিবেচনায় আসবে।

টার্ম অফ রেফারেন্স অনুযায়ী এই সমতা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। একটি যথেষ্ট বড় সংখ্যক ব্যক্তি বিশেষ করে পশ্চিম অংশ থেকে যারা প্রতিউত্তর এবং প্রমান দাখিল করেছেন তারা জোরালোভাবে সমতা ধারণার বিরোধিতা করেছেন প্রধানত নিম্নলিখিত তথ্য ভিত্তিতে-

১। ভোটারদের সমতার ধারনাটি যে অংশে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বসবাস করে তাদের বিরুদ্ধে অবিশ্বাসের ভিত্তিতে তৈরি করা। যদি এই ধরনের অবিশ্বাস কে শিকড় গাড়তে দেয়া হয় তাহলে তা খারাপ নীতির নজির তৈরি করবে এবং একটি দুষ্ট চক্র হিসাবে বিশালতা লাভ করবে। এটি একই সাথে  এক অংশের জনগণের প্রতি অন্য অংশের জনগণের অবিশ্বাস ও সন্দেহ আরো বৃদ্ধি করবে এর ফলে জাতীয় সংহতি কে দুর্বল করে ফেলবে।   

২। সমতার ধারণাটি একটি ভুল পূর্বানুমান এর উপর প্রতিষ্ঠিত। এই ধারণা অনুযায়ী মনে করা হয় যে ভোটাররা শুধুমাত্র তাদের অংশ থেকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারি প্রার্থীকে ভোট প্রদান করবে। আশা করা হয় একজন রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হবেন প্রচন্ড ধীশক্তি, শালপ্রাংশু ব্যক্তিত্ব, ও একতার অধিকারি। ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এমন ব্যক্তিকেই যার ভিতর উক্ত গুণাবলি বিদ্যামান তিনি কোথা থেকে এসেছেন সেটা বিবেচ্য নয়।

৩। যদি রাষ্ট্রপতি পদের জন্য আগ্রহী তিন ব্যক্তি একই অংশের না হয় তাহলে দুই জন হয়ে হতে পারে এক অংশের এবং বাকি এক জন হতে পারে অন্য অংশের। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটি একটি ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে যা সমতা বিধানের অকিঞ্চিতকর ধারনাটিকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারবে।

৪। উভয় অংশের নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে ভোটাররা নির্বিশেষে ভোট প্রধান করবে সেই সব রাজনৈতিক দলের দেয়া প্রার্থীদের বসবাসের জায়গার হিসাব ব্যতিরেকেই। এই অবস্থায় সমতার ধারনার কোন মুল্য নেই।

কোন সন্দেহ নাই যে সমতার ধারনার ব্যাখ্যায় কিছু ভালো যুক্তি বিদ্যামান কিন্তু সমতার ধারনার যোগ্যতা পরিক্ষা করা কমিশনের এক্তেরিয়ারে নেই। কমিশনকে, রেফারেন্স শর্তাবলী অনুযায়ী, সত্য হিসাবে দুইটি বিষয়কে অধিষ্ঠিত ধরে নিতে হবেঃ সেগুলো হলো  

১। সংবিধান অনুযায়ী সরকারের ধরন হবে রাষ্ট্রপতি শাসিত

২। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি পরোক্ষ বা সরাসরি যাই হোক না কেন প্রত্যেক প্রদেশ থেকে সমান সংখ্যক রাষ্ট্রপতি নির্বাচক হিসাবে থাকবে। সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতির ক্ষেত্রে কিভাবে নির্বাচকদের সমতা নির্ধারণ করা যায় সেই প্রশ্নে ফিরে এলে আমাদের কাছে মনে হয় সমতার অন্তর্নিহিত নীতিটি বজায় রেখে একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করা সম্ভব।   মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন ব্যতিত জাতীয় পরিষদে ১৫০ সাধারন আসন রয়েছে। তার মধ্যে ৭৫ টি পূর্ব অংশে এবং ৭৫ টি পশ্চিম অংশে বরাদ্ধ। – ফলে এক একটি অংশে ৭৫ টি একক নির্বাচক মণ্ডলী রয়েছেন। ধরা যাক এক এক জন নির্বাচক মণ্ডলী এক একটি ইলেক্ট্রাল ভোট। ফলে প্রত্যেক অংশের ইলেক্টোরাল ভোট সমান হবে। এই ১৫০টি আসনের প্রত্যেকটিতে নির্বাচন প্রত্যক্ষ ও প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটাধিকার ভিত্তিতে হবে। এই আসন গুলোতে যেই জিতুক রাষ্ট্রপতি প্রার্থীকে তাদের ভোট পেতে হবে। এই পদ্ধতিতে যে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী মোট ১৫০ আসনের মধ্যে সব থেকে বেশি ইলেকট্ররাল ভোট পাবে তিনিই রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হবেন। এ;ই পদ্ধতি একই সাথে প্রাপ্ত বয়স্কদের সরাসরি ভোটারাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত হবে এবং সমতার নীতিও বজায় থাকবে।

১৪। সমতা বজায় রাখার জন্য স্থায়ী ইলেক্টোরাল কলেজ জরুরি নয়।  এটা সম্ভবত যুক্তি হতে পারে যে পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদের মধ্যে প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে দেশের দুই অংশের মধ্যে যখন ভোটারের ভোট সমতা সুরক্ষিত প্রত্যকে অংশের রয়েছে ৭৫ টি ভোট ।একদিক থেকে এইটা সত্য হতে পারে। কিন্তু কোন সন্দেহ নাই যে ১৩ অনুচ্ছেদে প্রস্তাবিত নীতির অন্তর্নিহিত সমতা  পদ্ধতি দ্বারা সমতা  নিশ্চিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সমতার অন্তর্নিহিত নীতিটি হচ্ছে ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে দুই অংশের সমান ক্ষমতা থাকবে যাতে কোন অংশে কম জনগোষ্ঠী থাকার কারনে অন্য অংশ তাদের উপর প্রভুত্ব খাটাতে না পারে। উল্লেখিত পদ্ধতিতে দুই অংশের ইলেকট্রোরাল ভোট সমান থাকব (প্রত্যেকটিতে ৭৫ টি)। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দুই অংশের ভোটের শক্তি সমান থাকবে যদিও রাষ্ট্রপতি নির্বাচক ভোটের ক্ষেত্রে এক অংশ অন্য অংশ অতিক্রম করতে পারবে। অন্য ভাষায় এক অংশের রাষ্ট্রপতি ভোটের বৃহৎ সংখ্যা অন্য অংশের ভোটের ক্ষমতার উপর কোন ভুমিকা রাখবে না। এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এক অংশ অন্য অংশের উপর প্রভুত্বসুচক অবস্থানে চলে যাবে এমন প্রশ্ন উঠবে না।  তাই আমরা সরসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এবং উভয় অংশের মধ্যে সমতা রক্ষায় স্থায়ী ইকেলট্রোরাল কলেজের কোন প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করি না। আমরা মনে করি শুধু মাত্র এক টার্মের জন্য পরোক্ষ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন একটি অন্তর্বর্তী ইলেক্ট্রোরাল কলেজের মাধ্যমে হতে পারে। পরবর্তী অনুচ্ছেদে তার কারন ব্যাখ্যা করা হলো।

১৫। অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ হিসাবে পরোক্ষ ভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঃ

যদিও ১২ অনুচ্ছেদে আমরা ইতোমধ্যে বলেছি যে সংবিধানের অধিনে রাষ্ট্রপতি যে বিস্তৃত ক্ষমতা ভোগ করবেন সে কারনে একটি সরাসরি প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে তাকে নির্বাচিত করা উচিৎ। আমরা দেশের বিরাজমান অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং এই অবস্থায় দুই বছরের স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থীরা কিছু ব্যাবহারিক সমস্যার মুখোমুখি হবেন। যাইহোক আমরা মনে করি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সরাসরি পদ্ধতি এর ব্যবহারিক উপযোগিতার আলোকে বিচার করতে হবে। এই রাষ্ট্র দুইটি আলাদা অংশে বিভক্ত এবং উভয়ের ভিতর ১০০০ কিলোমিটার বিদেশি ভুমি রয়েছে। দুই অংশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা কোন ভাবেই পর্যাপ্ত নয় খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠে এক জন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী কিভাবে দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা জনগণের সাথে যোগাযোগ করেবেন, তার পরিকল্পনা সমুহ জনগণের সামনে তুলে ধরবেন, কিভাবে উল্লেখিত পদের জন্য তার যোগ্যতা তুলে ধরে তার প্রার্থিতার জন্য সমর্থন চাইবেন? এটি প্রায় অসম্ভব কাজ একজন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর জন্য। এই সমস্যার সমাধান হতে পারে একটি রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা ও সমর্থনের মাধ্যমে বা এই দুইয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমেই কেবল মাত্র একজন প্রার্থী তার প্রার্থিতা সফলভাবে টিকিয়ে রাখতে পারেন।  

একই অবস্থা জাতীয় পরিষদের পদপ্রার্থীদের  জন্য সত্য নয় কারন জাতীয় পরিষদের প্রতিটি আসন তুলনামূলক ভাবে আকারে অনেক ছোট এবং একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সিমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ। ফলে একজন জাতীয় পরিষদের সদস্য পদ প্রার্থীর জন্য তার পরিকল্পনা আকারে ছোট ভোটারদের সামনে তুলে ধরতে পারেবন, আসনের বিভিন্ন স্থানে মিটিং এর মাধ্যমে, ইশতেহার, বুকলেট লিফলেট বিতারনের মাধ্যমে।  কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর জন্য একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থন ও সহযোগিতা অপরিহার্য। তবে এটা দুঃখের বিষয় যে বিদ্যামান কোন রাজনৈতিক দলই এখন পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে  জাতীয় পর্যায়ে সংগঠিত নয় এবং জনগণের ভিতর তাদের শিকড় শক্ত করে তৈরি করতে পারেন নাই। ১৯৫৮ সালের সামরিক আইনের মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র খুব সম্প্রতি সময়ে নতুন রাজনৈতিক দল আইন প্রণয়নের  দ্বারা এযাবৎ নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে । পাশাপাশি একই আইনে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। উল্লেখিত আইনে এইসব সুযোগ থাকার পরেও কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক দলের নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন তারা তাদের রাজনৈতিক দলকে পুনরুজ্জীবিত করবেন না যদি না বর্তমান সংবিধানকে আরো গণতান্ত্রিক করা হয়। এক সময় দেশের দুই অংশেই অনেক সমর্থক ছিল এমন রাজনৈতিক দল অল পাকিস্থান মুসলিম লীগ কে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে কিন্তু দলটি দুটি আলাদা চেহারা নিয়ে দুই দুই অংশে বিভক্ত হয়ে পরেছে। এই রাজনৈতিক দলটির পূর্বসূরি মুসলিম লিগের ফান্ড এখন পর্যন্ত কোন অংশকেই দেয়া হয় নি। দুই দলের কেউই কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি হাজির করতে পারে নাই এমনকি সদস্য অন্তভুক্তির মত ব্যাপারেও কোন কর্মসূচি নেই। এক বা দুইটি রাজনৈতিক দল ও পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে কিন্তু পূর্বের আইন সভায় তাদের তেমন প্রতিনিধিত্ব নেই ফলে জাতীয় রাজনৈতিক দল হিসাবে তাদের তেমন গুরুত্ব নেই, ভবিষ্যতে তারা কতটুকু জাতীয় মর্যাদা অর্জন করতে পারে সেটাও দেখার বিষয়।

দেশ জুড়ে জনপ্রিয়তা এবং গুরুত্ব অর্জনের জন্য রাজনৈতিক দল গুলোকে ভালো রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে যাতে করে তাদের প্রতিনিধিরা জনগণের সমর্থন লাভ করে এবং জনগণের ভিতর তাদের অবস্থান শক্ত করে তৈরি করতে পারেন। পুনরুজ্জীবিত রাজনৈতিক দল গুলো মাত্র তাদের গঠন মুলক পর্যায়ে রয়েছে। সম্ভবত পর্যাপ্ত আর্থিক কাঠামোর উপর শক্ত ভাবে দাড়াতে তাদের আরো সময় লাগবে। তাদের পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন প্রতিনিধিত্বপূর্ণ নির্বাচনে বা উপ নির্বাচনে তারা অংশ গ্রহন করে নাই। .এই দলগুলোর শক্তি এবং মর্যাদা  শুধুমাত্র পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের এবং  জাতীয় পরিষদের সাধারণ নির্বাচনের পর প্রস্ফুতিত  হবে।

যতক্ষন পর্যন্ত না একটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে ততক্ষন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যাবে না সেই রাজনৈতিক দলটির জাতীয় পর্যায়ে জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা আছে কিনা। যেহেতু রাজনৈতিক দল গুলোর জনপ্রিয়তার অভাব রয়েছে এবং প্রচার মাধ্যম ও যোগাযোগ ব্যাবস্থার অনুন্নত রয়েছে ফলে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের ৪১ কোটি একর জুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভোটারদের সামনে তাদের কর্মসূচি নিয়ে পৌছানো খুবই কঠিন হবে। এই সব ব্যবহারিক অসুবিধাকে বিবেচনায় নিলে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পরক্ষো ভোটের মাধ্যমে একটি অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ হিসাবে ইলেকট্রোরাল কলেজের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু পরবর্তী সব রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রাপ্ত বয়স্কদের সরসরি ভোটের মাধ্যমে হওয়া উচিৎ।  

১৬ইলেক্টোরাল কলেজের গঠিত বিধানসভার সদস্যদের উপযুক্ত নয়ইলেক্টোরাল কলেজের গঠিত তিনটি      পরিষদের সদস্যদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচণের বিরুদ্ধে মৌলিক আপত্তি রয়েছে। প্রথমত, যদি সেই ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার জন্য এই কার্যে যৌথভাবে নিয়োজিত তিন পরিষদের সদস্যদের প্রতি তার অপরিসীম ক্ষমতার ব্যবহার করে, সেইসব সদস্য যাদের জন্য রাষ্ট্রপতি দায়বদ্ধ নয়, হয়তো বা তাঁর সাথে দরকষাকষি করার মতো অবস্থানে আছে এবং যার ফলে তাকে  সাংবিধানিক ক্ষমতার ব্যবহারে এবং এমনকি নীতি ও শাসনপ্রণালীর চর্চাতেও কম কার্যকর করে ফেলতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতি একটি ভাল সরকার ও নির্ঝঞ্ঝাট প্রশাসনের প্রতি সহায়ক হওয়ার জন্য  কঠিন হয়ে যেতে পারে।  একটি সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় যেখানে মন্ত্রীরা আরো অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন, রাষ্ট্রপ্রধানের খুবই সামান্য বিবেচনামূলক ক্ষমতা রয়েছে, সেখানে পরিষদের সদস্যদের দ্বারা রাষ্ট্রপ্রধানের নির্বাচণ হয়তো বা যথাযোগ্য হতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রপতির ব্যবস্থাপনায় সরকারের অবস্থান একেবারেই ভিন্ন। এই ধরণের সরকার ব্যবস্থায়, পরিষদের সদস্যদের দ্বারা রাষ্ট্রপতির নির্বাচন স্পষ্টতই অনুপুযুক্ত যা একই সাথে সেই সরকারের অন্তর্নিহিত নীতির সাথে বেমানান, বরং কার্যকর করতে পরিষদের সদস্যদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করা উচিত নয়। দ্বিতীয়ত, যদি রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ২৩তম অনুচ্ছেদের অধীনে যেকোন কারণে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেয়, সেখানে জাতীয় পরিষদ ভাঙ্গার ১২০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি নিজেই স্বীয় পদে বহাল থাকেন। এমতাবস্থায় সংবিধানের ১৬৮ অনুচ্ছেদের অধীনে ৯০ দিনের মধ্যে পরিষদের সদস্যদের জন্য সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। যখন আমাদের দ্বারা প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পরিষদের সদস্যদের নির্বাচনের সুপারিশ তৈরী করা হয়, তখন পুরো নির্বাচন ঘোষিত ৯০ দিনের মতো কম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা কদাচিৎ সম্ভব। অভিজ্ঞতা দেখাচ্ছে যে এমনকি গতবারের পরিষদের সদস্যদের পরোক্ষ নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের সর্বোচ্চ চেষ্টার পরেও নির্বাচন সম্পন্ন করতে তিন মাস লেগে গিয়েছে। যদি ভেঙ্গে দেওয়া জাতী পরিষদ এর অবসানের ৯০ দিনের মধ্যে পুনর্গঠিত না হয়, তবে সেই রাষ্ট্রপতি যিনি সেই পরিষদের অবসানের সাথে সাথে পদ হতে বের হয়ে এসেছেন অথবা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আরেকজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জন্য পুনঃ নির্বাচিত করতে কোন জাতীয় পরিষদ থাকবে না  এইটি রাষ্ট্রপতির পদকে শূন্য করে ফেলতে পারে, যাই হোক না কেন, তা পুরোপুরিভাবে শাসন চালাতে পারছে না, কিন্তু সেখানে এমনতরো শূন্যতা থাকবে না যদি পরিষদের সদস্যরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের উদ্দেশ্যে কোন ইলেক্টোরাল কলেজ গঠন না করেন। সর্বশেষে, সংবিধানানুযায়ী যদি রাষ্ট্রপতির পদে নির্বাচনের জন্য প্রার্থীর সংখ্যা তিনের বেশী অতিক্রম করে, তবে তিন পরিষদের সদস্যরা যৌথভাবে নির্বাচনের জন্য তিনজন পার্থীকে নির্বাচিত করতে পারবেন। যখন রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থীদের নির্বাচন নিয়ে পরিষদের সদস্যদের ইতোমধ্যে মতামত থেকেই থাকে, তবে তা এইসব সদস্যদের নিজেদের নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে থেকে যেকোন একজনকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত করার আর কোন অধিকার রাখা নীতিগতভাবে সঠিক নয়।

 

          ১৭সংবিধানে বর্ণিত ইলেক্টোরাল কলেজের উপযুক্ত দৃঢ়তা বৃদ্ধিপরিষদের সদস্যদের নিয়ে গঠিত ইলেক্ট্রোরাল কলেজের সংবিধান অবাঞ্চিত করা হয়েছে, সংবিধানের বর্ণিত সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে বা না করেই এর দৃঢ়তা বাড়াতে এই কলেজের প্রয়োজনীয়তা থাকা উচিত। বিবেচ্য যে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ইলেক্টোরাল কলেজ গঠন খন্ডিত। এদের কেউ সংবিধানে বর্ণিত প্রেসিডেন্সিয়াল ভোটারদের সংখ্যা ৮০,০০০ই ধরে রাখতে চায়, অন্যরা এই সংখ্যার ২ থেকে ৫ গুণ বা তার বেশী বাড়ানোর আকাংখা পোষণ করে। প্রতিটি ইউনিয়নে মৌলিক গণতন্ত্রের আদেশের অধীন হিসেবে,  ১৯৫৯ সালে পাকিস্থানের জনসংখ্যা ৮ কোটি ধরে

 

 

 

<2.34.209>

 

 

        গড়ে ১০জন নির্বাচিত এবং ৫জন মনোনীত সদস্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এই বরাদ্দের ভিত্তিতে করা উক্ত ১৫ জন সদস্য একটি ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে। এটা ইঙ্গিত দেয় যে ইউনিয়নে মনোনয়নের ব্যবস্থা বিলুপ্ত হবে এবং মনোনীত জন নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা স্থলাভিষিক্ত হবেন। আবারো, এর মানে হচ্ছে যে একটি ইউনিয়ন ১৫জন নির্বাচিত সদস্য দ্বারাই পর্যাপ্ত ভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। যাই হোক, ইলেক্টোরাল কলেজ গঠনের জন্য, এটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যে ইউনিয়নে মনোনয়নের পদ্ধতি নির্বাচনে দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে বা হয়নি, এই কলেজ সংগঠন হিসেবেই ইউনিয়ন থেকে ভিন্ন। যাই হোক, এটা এইটি গুরুত্বপূর্ণ যে ইউনিয়নের অধীনে এলাকা ১৫ জন ব্যক্তি দ্বারা প্রতিনিধিত্বের জন্য যথেষ্ট। একটি ইলেক্টোরাল কলেজের যৌথ অবস্থানের ভিত্তিতে ধরা হলে, এযাবৎ ইলেক্টোরাল কলেজের দৃঢ়তা ৮০,০০০ এর পরিবর্তে ১,২০,০০০ হতে আসে যার ভিত্তিতে প্রতি ইউনিয়নের গড়ে ১০জন নির্বাচিত প্রতিনিধি নির্ধারিত হয়। এভাবে ১,২০,০০০ এর চিত্রটি বাস্তব সম্মত মনে হচ্ছে যখন এর ইতিবাচক ভিত্তি আছে, এটা হয়তো অসাধ্যও নয়। অতএব ইলেক্টোরাল কলেজের শক্তিমত্তা ১,২০,০০০ এ সংশোধন করা উচিত। তাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে পাকিস্থানের দুই অংশের ভোটারদের সাম্যতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ১,২০,০০০ নির্বাচনী ভোটের একেবারে অর্ধেক করে প্রতি অংশেই ভাগ করা উচিত।

 

          সংবিধানের সপ্তম খন্ডের ২য় অধ্যায় অনুযায়ী, দেশে ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের সংখ্যানুযায়ী সেই পরিমাণ ইলেক্টোরাল ইউনিট হিসেবে সংজ্ঞায়িত হবে। এর অর্থ এই যে প্রতি ইউনিট হতে শুধুমাত্র একজন সদস্য নির্বাচিত হবে। ইলেক্টোরাল কএজের সর্বমোট শক্তিমত্তা অনুসারে গড়ে প্রতি ৭৫০ জনে একজন সদস্য থাকবে। যেসব এলাকায় বিশেষ করে শহরে যেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশী, সেখানে অতো ছোট করে ইলেক্টোরাল ইউনিটের সীমা নির্ধারন নাও করা হতে পারে যার সহজ কারণ হচ্ছে, এমনকি দুই বা তিন ভবনে একসঙ্গে ৭৫০ জন বা তারও বেশী জনসংখ্যা থাকতে পারে। অতএব, সংবিধানের ইলেক্টোরাল কলেজের সুবিধার জন্য, আমরা সুপারিশ করছি যে সংবিধানের সপ্তম খন্ডের ২য় অধ্যায় যথোপযুক্তভাবে সংশোধন করা উচিত যাতে যখনই প্রয়োজন, বহু-সদস্যের ইলেক্টোরাল ইউনিটের সীমানা পুননির্ধারণের হুকুমনামা জারি করা যায়।

 

          এই প্রসঙ্গে, আমরা উল্লেখ করতে পারি যে ইলেক্টোরাল কলেজের কার্যাবলী সংক্রান্ত কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কর্মকর্তাসহ কিছু সাক্ষীদের এমন ধারনা যে প্রয়োজনানুযায়ী ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের স্থানীয় সরকারের কর্মকান্ডের অংশগ্রহণ করা উচিত এবং এই কার্যকলাপের পাশাপাশি তারা নির্বাচনে তাদের কার্যকলাপ বা ভোট প্রদানের দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। এমন ধারণা সঠিক নয়। সংবিধান অনুযায়ী, ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যরা শুধুমাত্র নির্বাচনে ভোট প্রদান বা গণভোটের কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হতে পারে। কিন্তু, সংবিধানের ১৫৮(৪) অনুচ্ছেদে দেওয়া আইন দ্বারা স্থানীয় সরকারের কার্যাবলীও ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের উপর অর্পিত হতে পারে। এটা নিছকই ভবিষ্যতের প্রয়োজনে শর্তারোপকে সক্রিয় করা মাত্র।  সুতরাং, সঠিকভাবে বলতে গেলে, ভোট প্রদানে তাদের স্বাভাবিক কার্যাবলী ছাড়াও, ইলেক্টোরাল কএলেজের সদস্যদের স্থানীয় সরকারের কার্যাবলীতে অংশগ্রহণে প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে যদি তেমন কার্যাবলী আইনের মাধ্যমে তদুদ্দেশে অর্পিত হয়ে থাকে।

 

          ১৮। ইলেক্টোরাল কএলেজের সদস্যদের যোগ্যতা এবং অযোগ্যতা- যে কোন নাগরিক যদি ২৫ বছরের নীচে না হয় এবং সংবিধানের ১৫৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত অন্যান্য যোগ্যতার অধিকারী হয় এবং ১০৩ অনুচ্ছেদের ধারা (২)তে উল্লেখিত অযোগ্যতার কোন বিষয়ের সাথে না থাকে তবে সে

 

 

 

 

<2.34.210>

 

 

        প্রস্তাবিত ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যতার জন্য যোগ্য। ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্য হিসেবে অনাকাঙ্খিত ব্যক্তির প্রবেশ ঠেকাতে এটা প্রয়োজনীয় যে অনুচ্ছেদে বর্ণিত অযোগ্যতাসমূহের যেন বিহিত করা হয়। সংবিধানের ১৫৮ (১) অনুচ্ছেদে এই বিধানের সুপারিশ করা আছে।

 

রাষ্ট্রপতি পদপার্থীদের নির্বাচন।

 

          ১৯। পরিষদের সদস্যদের দ্বারা রাষ্ট্রপতি পদপার্থীদের সংখ্যাজনিত আকাঙ্খা এবং তাদের নির্বাচন সীমাবদ্ধ। সংবিধানের ১৬৭ অনুচ্ছেদে বর্ণনানুযায়ী রাষ্ট্রপতি পদে অন্তবর্তিকালীন রাষ্ট্রপতির পদে আসীন ব্যক্তি ব্যতিরেকে নির্বাচনের প্রার্থীদের  সংখ্যা যদি তিনের বেশী হয়ে যায় তবে জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা যৌথ উদ্যোগে নির্বাচনের জন্য তিনজন প্রার্থীকে মনোনীত করতে হবে। যাই হোক, যদি দুই প্রাদেশিক পরিষদ যৌথভাবে তিনজন প্রার্থীর মনোয়নে করে থাকে তবে জাতীয় পরিষদ এই ক্ষেত্রে উহ্য থাকবে। উপরোক্ত পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি পদে তিনজন প্রার্থীর সংখ্যা নির্ধারিত হলে এবং সেই প্রার্থীদের মনোয়নে স্বেচ্ছাচারীতা দেখা দেবে। এটা খুবই অনাকাঙ্খিত যে, যে ব্যক্তি তার দেশপ্রেম, স্বার্থহীন কাজ, প্রশংসনীয়তার সাথে পরিষেবা, চারিত্রিক সক্ষমতা, দক্ষতা, ব্যক্তিত্বে কারণে দেশ্যব্যাপী নাম ও যশ অর্জন করেনি এবং এমনকি কোন শক্তিশালী রাজনৈতিক দল কোন অর্থেই এর পিছনে না থাকা স্বত্বেও সেই ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির মত উচ্চ সরকারী পদে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে পারে। এমনতরো উচ্চ মর্যাদার ব্যক্তির সংখ্যা সীমিত করা হচ্ছে, যুক্তিসঙ্গতভাবেই এটা অনুমিত যে রাষ্ট্রপতি পদ পার্থীর সংখ্যা সচরাচর তিন বা চারের বেশী হবে না। কালক্রমে শক্তিশালী রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থানের সাথে তাদের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দুইয়ে নেমে আসতে পারে। সুতরাই এটা আমাদের মনে হচ্ছে যে ইচ্ছামতো রাষ্ট্রপতি পদপার্থীদের সংখ্যা নির্ধারনের প্রয়োজনীয়তা নেই কিংবা পরিষদের দ্বারা সদস্যদের প্রার্থীদের মনোনয়ন  উচিত নয়। যদি পরিষদের সদস্যদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের মনোনয়নের অধিকার বজায় থাকে, তবে ই অধিকারের জন্যই প্রার্থীদের সাথে দরকষাকষির সুযোগ প্রদান করবে। এটা হয়তো পরিষদের সদস্যদের উপর নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির নির্ভরতার কারণ হয়ে যেতে পারে, যেভাবেই হোক, তা কিছুতেই কাম্য নয় যার কারণ ইতোমধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে। ১৬৭ অনুচ্ছেদের বিধান প্রসঙ্গে পরিষদের সদস্যদের দ্বারা রাষ্ট্রপতি পদপার্থীদের মনোনয়ন পুরোটাই সঠিক নয়, যে জন্য উল্লেখিত অনুচ্ছেদ প্রাদেশিক পরিষদের অবসানের সময় কিছুতেই প্রয়োগ করা উচিত নয়। যদি প্রাদেশিক পরিষদের অপসারণ বজায় থাকে সেই সাথে যখন রাষ্ট্রপতি পদপার্থীদের মনোনয়ন ধ্বসে পড়ার কারণ হতে পারে প্রার্থীদের সংখ্যা নির্ধারণে কোন বিধি নিষেধ না থাকা এবং তদ্রুপ রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থীদের ব্যয়ভার বহনে স্বাধীনতা থাকবে যে কারণে তাদের নির্বাচণে কোন প্রশ্ন উঠবে না। শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত রাজনৈতিক দলের সহযোগীতা ছাড়া যে কোন প্রার্থীর জন্য রাষ্ট্রপতির মতো উচ্চ মর্যাদার প্রার্থীতা সচল রাখা খুবই কঠিন হয়ে যাবে। এমতাবস্থা চালু হলে, রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের সংখ্যা  অতিক্রম করা দুঃসাধ্য হবে সেই সব রাজনৈতিক দলগুলোর যাদের সংখ্যা যদিও দুই বা তিনের বেশী নাও হতে পারে। এতদনুসারে, রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের সংখ্যা দুই বা তিনে জারি রাখার নিষেধাজ্ঞা আছে যে জন্যে সাধারণত কোন প্রকার সাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজনীয়তা নেই- এতো সব বিষয় ও পরিস্থিতি প্রসঙ্গ ক্রমে,  আমরা মনে করি যে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের সংখ্যা নির্ধারনে এবং পরিষদের সদস্যদের দ্বারা তাদের মনোয়নের বিধান তুলে নেওয়া উচিত।

 

          এই অনুচ্ছেদের প্রকাশিত মতবাদের সাথে চেয়ারম্যান একমত নন এবং একটি পৃথক চিরকুট যুক্ত করা হয়েছে।

২০। বিদায়ী কিংবা নব পরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের মনোনীত করবে কি না যদি সংবিধান প্রদত্ত ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের মনোয়নের পদ্ধতি বজায় থাকে, তবে আমরা সুপারিশ করবো যে তা যেন তিন পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা করা হয় এবং এদের বিদায়ী সদস্যদের দ্বারা নয় অবশ্যই। এর জন্য কারণটি সুস্পষ্টভাবে বিশদ ভাবে বিবৃত করা হয়েছে। এটা বলা যথেষ্টই যে যখন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের মনোনয়নে বিদায়ী সদস্যের প্রতিনিধি ব্যক্তি কমে যাবে, কারণ পরিষদের একজোট হওয়ার মেয়াদ আসন্ন মেয়াদ শেষে অতিক্রান্ত হবে। অন্ততপক্ষে, নবনির্বাচিত সদস্যদের চাইতে বিদায়ী সদস্যদের বেশী থাকবে না। যদি, পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্যদে দ্বারা রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী নির্বাচনের সুপারিশ গৃহীত হ, তবে অন্তবর্তিকালীন রাষ্ট্রপতি পদমর্যাদার মেয়াদ আরো প্রায় দুই মাস বর্ধিত করার প্রয়োজন হতে পারে যাতে নির্বাচন কমিশনকে সক্রিয় করে সংবিধানের ১৬২ (২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত ১২০ দিনের সময়কালীন সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সুসম্পন্ন করতে পারে।

 

          ২১। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী নির্বাচনে ব্যালট পদ্ধতি রাষ্ট্রপতি পদপার্থীদের মনোনয়নের উদ্দেশ্যে তিন পরিষদের সদস্যদের যৌথ উদ্যোগের জন্য সংবিধান নিজেই ব্যালটের প্রক্রিয়া সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়নি। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের সংখ্যা সংখ্যা তিনে বিধিবদ্ধ করে দেওয়া আছে, যদি সেই পদের জন্য তিনের চাইতে বেশী ব্যক্তির নথিপত্র জমা হয় সে জন্য ব্যালটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই ক্ষেত্রে ব্যালটের পরিবর্তে হয় একাধিকসংখ্যক-ভোট অথবা একক-ভোট পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে প্রথমত, পরিষদের প্রত্যেক সদস্য তার পছন্দ মোতাবেক তিনটি ভোট-একটি করে প্রতি তিন জন প্রার্থীর জন্য প্রদান করতে পারে। দ্বিতীয়ত, পরিষদের প্রত্যেক সদস্য তার পছন্দ মোতাবেক যে কোন একজন প্রার্থীর জন্য শুধু মাত্র একটি ভোট প্রদান করতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই, সেই তিন জন প্রার্থীর মধ্যে যিনি সর্বোচ্চ ভোট নিজের করে নিতে পারবেন তিনিই  রাষ্ট্রপতি পদে সুযোগ্য  প্রার্থী হিসেবে ঘোষিত হবেন। ভোটিং্যের এই দুই পদ্ধতির প্রথমটি, যা একাধিসংখ্যক-ভোটিং ব্যবস্থায় পুরোপুরি অনাখাঙ্খিত যখন এই পদ্ধতির অধীনে তিন পরিষদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল তাদের ভোট একত্রিত করতে পারে যাতে সকল তিন প্রার্থীই তাদের পছন্দ মোতাবেক নির্বাচিত হতে পারে, পরিষদের সংখ্যালঘুদের কাছে তাদের মনোনীতদের নিশ্চিত করার জন্য কোন সুযোগই রাখে না। যদি সংখাগরিষ্ঠ দলটি একই রাজনৈতিক দলের হয়ে থাকে, যা সাধারণত ঘটে, তখন এটা প্রায়ই নিশ্চিত যে সংখালঘু দলের মনোনীতদের নির্বাচিত হওয়ার কোন সুযোগই থাকে না। একক-ভোটিং ব্যবস্থায়, যাই হোক না কেন, সংখাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘু উভয় দলই তাদের প্রদত্ত ভোটের বিশাল পার্থক্যের পরিবর্তে তাদের মনোনীতের নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে। যেহেতু একক-ভোটিং পদ্ধতি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘু উভয় দলের কাছেই পরিচ্ছন্ন সুযোগ প্রদান করে, তাই আমাদের সুপারিশ হচ্ছে এই রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতি পরিষদ সদস্য তাদের পছন্দ মোতাবেক প্রার্থী বেছে নিতে শুধুমাত্র একটি ভোট প্রদান করতে পারবে।

 

          ২২। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের নির্বাচনের জন্য সময়রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী নির্বাচনে সময় খুবই প্রাসঙ্গিক যখন এটি নির্বাচনের একটি পরোক্ষ পদ্ধতি। যদি রাষ্ট্রপতি পরোক্ষভাবে ইলেক্টোরাল পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচিত হয় তবে এই নির্বাচন দুই ভাগে অনুষ্ঠিত হওয়াই বাঞ্ছনীয়। প্রথম পর্যায়ে, প্রাথমিক ভোটাররা দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটারদের নির্বাচন করবে যারা, দ্বিতীয় পর্যায়ে রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত করবে। সুতরাং, দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটাররা তাদের কর্তৃত্ব প্রাথমিকদের কাছে লাভ করে থাকে। অতএব, এইভাবে, এটা কাঙ্খিত যে প্রাথমিক ভোটার যাদের কর্তৃত্বের সাথে সতিকার অর্থে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় এবং নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সত্যিকার অর্থে যাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন তাদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের নাম প্রাথমিক নির্বাচনের সময়েই জানা উচিত।

<2.34.212>

 

 

এটা কাঙ্খিত যে কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি তৈরী জন্য প্রাথমিক ভোটার হতে দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটাররা বাস্তব এবং কার্যকরী। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটাই হুবহু পালন করা হয়। , অতএব, আমরা সুপারিশ করছি যে, যদি সার্বিকভাবেই প্রয়োজন হয়, তবে প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের মনোনীত করে ফেলতে হবে। যাই হোক, যদি, পরিষদের সদস্যদের দ্বারা রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের নির্বাচন সম্পন্ন করাকে দূরে রাখা হয়, কিন্তু ইলেক্টোরাল কলেজের পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান বহাল থাকে, তাহলে উপরে উল্লেখিত একই কারণে একইভাবে বৈধভাবে মনোনীত প্রার্থীদের নাম জানানো উচিত এমনকি যদি সংবিধানের ১৬৭ অনুচ্ছেদের কার্যপ্রণালীতে অনুরক্ত না হয়েও রাষ্ট্রপতি পদপার্থীদের সংখ্যা তিনের চাইতে বেশী হচ্ছে না।

 

যুগপৎভাবে নির্বাচন ও নির্বাচন-ব্যয়ের বিবরণ সম্পন্ন করা

 

          ২৩। যুগপৎভাবে নির্বাচন ও নির্বাচনব্যয়ের বিবরণ সম্পন্ন করার সম্ভাব্যতা যাচাই যদি প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে পরিষদের সদস্য এবং রাষ্ট্রপতি পদের জন্য সরাসরি নির্বাচনের সুপারিশ গৃহীত হয় এবং পরিষদের সদস্যদের দ্বারা রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের মনোনয়নের বিধান মুছে ফেলা হয় যেভাবে আমরা প্রস্তাব করেছিলাম, তবে একই নির্বাচনী যন্ত্রপাতি যোগানের মাধ্যমে একই পোলিং ষ্টেশনে একটি বুথ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য, একটি বুথ জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের জন্য এবং তৃতীয় বুথটি প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনের জন্য- তিনটি আলাদা বুথের দ্বারা একই সাথে এইসব নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হতে পারে। একই সময়ে একই স্থানে এই সমস্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার ফলস্বরূপ খরচ অবশ্যই কমে আসবে। যাই হোক, যদি, পরিষদের সদস্যরা সরাসরি প্রাপ্তবয়স্কদের ভোতের মাধ্যমে নির্বাচিত হয় এবং রাষ্ট্রপতি ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হয়, তাহলে তিনটি আলাদা নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে- একটি হবে পরিষদের সদস্য নির্বাচনের জন্য, দ্বিতীয়টি হবে ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের নির্বাচন করার জন্য এবং তৃতীয়টি হবে সেই কলেজের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য, যে জন্য একই সাথে পরিষদের সদস্য এবং বৃহৎ সংখ্যক ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্য নির্বাচনের আয়োজন সম্পন্ন করা প্রশাসনের জন্য যথেষ্টই দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে। এটাও ঠিক যে, তিনটি পৃথক নির্বাচনের খরচ  সরাসরি পদ্ধতিতে নির্বাচনের খরচের চাইতে বেশী হবে যা পরিশিষ্ট-V তে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

 

মহিলা সদস্য নির্বাচন

 

          ২৪। সংরক্ষিত আসন হতে জাতীয় পরিষদে মহিলা সদস্য নির্বাচনসংবিধান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের দ্বারা বিধানসভার জন্য পরোক্ষভাবে মহিলা সদস্য নির্বাচন করতে দেয়। এই উদ্দেশ্যে,  মহিলাদের জন্য প্রাদেশিক পরিষদে পাঁচটি আসন এবং জাতীয় পরিষদে ছয়টি আসন সংরক্ষিত করে রাখে। যাই হোক, এইভাবে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের ফলে সর্বজনীন আসনে তাদের প্রতিদ্বন্ধীতা করার উপায় থাকে না। মহিলারা  প্রাদেশিক পরিষদের পাঁচটি আসনে সেই পরিষদের সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে থাকে। প্রাসঙ্গিকভাবেই, জাতীয় পরিষদের সংরক্ষিত ছয়টি আসনে প্রতি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের দ্বারা তিনটি করে আসনের জন্য নির্বাচিত হয়। সহ-সমন্বয়সাধনের নীতিতে, প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের দ্বারা সংরক্ষিত আসনে মহিলা সদস্য নির্বাচন হয়তো বা সমর্থিত হতে পারে, কিন্তু জাতীয় পরিষদে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের দ্বারা সংরক্ষিত আসনে মহিলা সদস্য নির্বাচন তেমন ভাবে সমর্থিত নাও হতে পারে এবং যুক্তিসঙ্গত ভাবে সমালোচিতও হতে পারে। স্বচ্ছতার নিরিখে, প্রতিটি পরিষদে সেই পরিষদে সংরক্ষিত আসনের জন্য মহিলা সদস্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচকমন্ডলী গঠন করা উচিত। অতএব, আমরা সুপারিশ করছি যে,  জাতীয় পরিষদে

<2.34.213>

 

 

যেসব সদস্য পূর্ব পাকিস্থানের সাধারণ নির্বাচনী এলাকা হতে নির্বাচিত হন তাদেরই জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্থান হতে মহিলাদের নির্বাচন করা উচিত। একইভাবে, জাতীয় পরিষদের যেসব সদস্য পশ্চিম পাকিস্থানের সাধারণ নির্বাচনী এলাকা হতে নির্বাচিত হন তাদেরই একই পরিষদে পরিষদে পশ্চিম পাকিস্থান হতে মহিলাদের নির্বাচন করা উচিত।

 

উপজাতিয় এলাকা

 

          ২৫। উপজাতিয় এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা। পশ্চিম পাকিস্থানের উপজাতীয় এলাকায় যেখানে বিশেষ এবং উপজাতীয় পরিবেশ বজায় আছে সেখানে রাষ্ট্রপতি ও পরিষদ সদস্য নির্বাচনের বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন। উপজাতীয় এলাকা জনবিরল এবং কিছু এলাকার জনসংখ্যা যাযাবর প্রবৃত্তি হয়ে থাকে। উপজাতীয় এলাকায় যোগাযোগ ও পরিবহণের সুবিধার দিক থেকে মোটেও সন্তোষজনক নয়, যোগাযোগের জন্য ঐ এলাকার মধ্যে অনেক জায়গা আছে যেখানে প্রবেশ করা খুবই কঠিন। উপজাতীয় লোকেরা খুবই রক্ষণশীল এবং কঠোরভাবে তাদের প্রথা ও রীতিনীতি মেনে চলে। উপজাতীয় মালিক যারা তাদের নিজ নিজ এলাকার উপজাতীয় লোকদের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে তারা তাদের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। উপজাতীয় লোকেরা জিরগা পদ্ধতি মেনে চলে এবং প্রবীন ও উপজাতীয় মালিকদের সমন্বয়ে গঠিত জিরগার সিদ্ধান্ত দ্বারা বাধ্যগত থাকে। আদিবাসী এলাকার নারীরা খুব বেশী রক্ষণশীল এবং তাদের রক্ষণশীলতা কঠোরভাবে তাদের পুরুষ কর্তৃক পরিচালিত হয়। এই রক্ষণশীলতা এতই কঠিন যে এমনকি লাঞ্চিত বা দন্ডপ্রাপ্ত হওয়া ঝুঁকি ব্যতিরেকে কেউই কোন মহিলার নাম উচ্চারণ করতে পারে না। এটা এমন বিশেষ উপজাতীয় পরিবেশের খাতে যে সংবিধানের সপ্তম খন্ডের ২য় অধায়ের অধীনে এইসব উপজাতীয় এলাকার মধ্যে ইলেক্টোরাল ইউনিটের গঠন এবং সেইসব এলাকায় পশ্চিম পাকিস্থানের অধিকৃত এলাকার মতো একই উপায়ে নির্বাচনের আয়োজন ও গ্রহণ সম্ভব নাও হতে পারে। অতএব, এটা প্রয়োজনীয় যে, উপজাতীয় এলাকায় প্রাসঙ্গিক সাংবিধানিক বিধানের সাথে ইলেক্টোরাল ইউনিত এবং নির্বাচনের ব্যবস্থা শিথিল করা উচিত এবং নির্বাচন কমিশনের আইনের দ্বারা তেমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত যা সেই সব এলাকার লোকেদের সঠিকভাবে এবং যথোপযুক্ত বাস্তবসম্মতভাবে  প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।

 

সিদ্ধান্ত ও সুপারিশের সারসংক্ষেপ

 

          ২৭।  এই প্রতিবেদন সম্পূর্ণভাবে রেফারেন্সের প্ররিপ্রেক্ষিতে জড়িত সকল বিষয়ের জবাবদিহিতা করে। সিদ্ধান্ত ও সুপারিশের সারসংক্ষেপগুলো যা আংশিকভাবে সর্বসম্মতির ভিত্তিতে এবং আংশিক বিভক্তিতে,  যা পরবর্তী অনুচ্ছেদে নিম্নরূপে সংকলিত হয়েছেঃ-

(i)  সংবিধানের সপ্তম খন্ডের ২য় অধ্যায় দ্বারা যে ইলেক্টোরাল পদ্ধতি নির্দেশিত তা বাস্তবসম্মতভাবে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ফলপ্রদ এবং উপযুক্ত উপকরণ নয়, যার কারণ ১১, ১২ এবং ১৩তম অনুচ্ছেদের দেওয়া আছে।

(ii) সর্বজনীনভাবে রাষ্ট্রপতি এবং জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন হওয়া উচতি (অনুচ্ছেদ ১০)।

(iii) প্রত্যেক নাগরিক যাদের বয়স ২১ বছর বা এর বেশী এবং যদি মানসিক ভারসাম্যহীন না হয় তবে তাদের ভোট দেওয়ার অধিকার আছে, অন্যথায় তারা অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে (অনুচ্ছেদ ১০)।

(iv) জাতীয় ও প্রাদেশিক সদস্য নির্বাচন সরাসরি হতে হবে এবং তা সর্বজনীনভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে (অনুচ্ছেদ ১১)

<2.34.214>

 

 (৫) সকল প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকারের উপর ভিত্তি করে সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অধিকতর সঠিক প্রক্রিয়া (অনুচ্ছেদ ১২)।

(৬) রেফারেন্স অনুযায়ী সমতা বজায় রাখার জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়া হতে হবে রিপোর্টের  অনুচ্ছেদ ১৩ এর পরামর্শ অনুযায়ী।  

(৭) দেশের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে যে সকল সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সে জন্য শুধুমাত্র সামনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে পরোক্ষ ভাবে ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে, কিন্তু এর পরের সকল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে সকল প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকারের উপর ভিত্তি করে সরাসরি নির্বাচন (অনুচ্ছেদ ১৫)।

(৮) ইলেক্টোরাল কলেজ জাতীয় অথবা প্রাদেশিক সরকারের সদস্যদের দ্বারা গঠিত হবে না (অনুচ্ছেদ ১৬)।

(৯) সাধারণ জনগণকে ব্যাপকভাবে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য ইলেক্টোরাল কলেজ হবে ১,২০,০০০ সদস্যের, ৬০,০০০ সদস্য প্রত্যেক উইং থেকে (অনুচ্ছেদ ১৭)।

(১০) পঁচিশ বছর বা তার বেশি বয়সের প্রত্যেক নাগরিক যারা সংবিধানের ১৫৭ ধারায় বর্ণিত গুণাবলির অধিকারী এবং সংবিধানের ১০৩ ধারার ক্লস (২) এ বর্ণিত অযোগ্যতাসমূহ যাদের নেই ,  তারা ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখবে (অনুচ্ছেদ ১৮)।

(১১) প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের সংখ্যার কোন বাধ্যবাধকতা থাকবে না এবং জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদের দ্বারা প্রার্থী নির্বাচনের যে আইন সংবিধানের ১৬৭ নং ধারায় আছে তা রদ করতে হবে (অনুচ্ছেদ ১৯)।

(১২) যদি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের সংখ্যা সীমিত করতে হয় এবং কারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারবে তাদের নির্বাচন পরিষদের সদস্যদের দ্বারা করার নিয়ম চালু থাকে তাহলে তা হতে হবে তিন পরিষদের নব্য নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা এবং বিদায়ী সদস্যদের দ্বারা নয়।  

(১৩) যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা পরিষদের নব্য নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হয় তাহলে সংবিধানের ১৬৫(২) ধারায় উল্লেখিত সময়ের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কাজ সমাপ্ত করার জন্য প্রেসিডেন্টের মেয়াদ দুই মাস বাড়াতে হবে (অনুচ্ছেদ ২০)।

(১৪) যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের নির্বাচন করতেই হয়, প্রত্যেক পরিষদ সদস্য তার পছন্দের প্রার্থীর জন্য শুধুমাত্র একটি ভোট দিতে পারবে (অনুচ্ছেদ ২১)।

(১৫) প্রাথমিক ভোটারদের (পরিষদের সদস্যরা) ভোটে কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদলকে কার্যকর করার জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের নির্বাচন অথবা মনোনয়ন ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের নির্বাচনের আগে এই সময়ে প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে তৈরি করা উচিত (অনুচ্ছেদ ২২)।

(১৬) যদি ইলেক্টোরাল কলেজ গঠনের আইন অপরিবর্তিত থাকে তাহলে সংবিধানের ৭ম অংশের ২য় অধ্যায়কে উপযুক্তভাবে পরিবর্তিত করতে হবে যেটি একাধিক সদস্য বিশিষ্ট ইলেক্টোরাল ইউনিটগুলোর সীমাবদ্ধতাকে চিহ্নিত করতে অনুমতি দেয় (অনুচ্ছেদ ২৩)। 

<2.34.215-216>

 

 (১৭) পূর্ব পাইস্তানে সাধারণ ভোটারদের দ্বারা নির্বাচিত জাতীয় পরিষদের সদস্যগণ পূর্ব পাকিস্তান থেকে তিনজন মহিলাকে জাতীয় পরিষদের জন্য নির্বাচিত করবে। একইভাবে, পশ্চিম পাইস্তানে সাধারণ ভোটারদের দ্বারা নির্বাচিত জাতীয় পরিষদের সদস্যগণ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে তিনজন মহিলাকে জাতীয় পরিষদের জন্য নির্বাচিত করবে (অনুচ্ছেদ ২৪)।

(১৮) ইলেক্টোরাল ইউনিট গঠন এবং নির্বাচন পদ্ধতির সাংবিধানিক নিয়ম নীতি আদিবাসী এলাকাগুলোতে শিথিল করতে হবে এবং আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে উপরোক্ত এলাকাগুলোতে এরূপ ব্যবস্থার ক্ষমতা দিতে হবে কারণ এটি সঠিক পন্থা বলে বিবেচনা করা হয় (অনুচ্ছেদ ২৫)।

উপসংহার এবং সুপারিশসমূহের ব্যাখ্যা

২৮। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পদ্ধতি এবং কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ব্যাতীত অন্যান্য সকল বিষয়ে আমাদের উপসংহার এবং সুপারিশসমূহে ঐক্যমতে পৌছেছি। আমরা প্রত্যেকেই সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের পক্ষে, কিন্তু আমাদের একজন, জনাব হাসান আলী মনে করেন যে ভোটারদের বয়স সীমা ২৫ হওয়া উচিত, কারণ তার মতানুসারে এই বয়সের পূর্বে একজন ব্যাক্তি প্রয়োজনীয় দায়িত্ববোধ এবং পূর্ণাঙ্গ ম্যাচুরিটি অর্জন করতে পারে না। তিনি আরো মতামত দেন যে একজন ভোটারের বয়স একজন ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যের থেকে কম হওয়া উচিত নয়, সংবিধানের ধারা ১৫৮(১) অনুযায়ী যার সর্বনিম্ন বয়স ২৫।

আমরা এ বিষয়েও একমত যে জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নির্বাচন হবে সরাসরি এবং সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের উপর ভিত্তি করে কিন্তু আমাদের দুজনের আলাদা নোট রয়েছে এবং তারা প্রশ্নটিতে ভিন্ন আঙ্গিকে পৌছেছেন। 

দুঃখের বিষয় হল যে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিষয়ে আমরা ঐক্যমতে পৌছাতে পারিনি। আমাদের তিনজনের মতামত হল, যেখানে সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হল সবথেকে উপযুক্ত পদ্ধতি, অনুচ্ছেদ ১১ থে ১৩ এবং ১৫ তে বর্ণিত কারণের জন্য শুধুমাত্র আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে হতে পারে। অবশিষ্ট দুজন মনে করেন যে ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকারের জন্য উপযুক্ত প্রক্রিয়া, কারণগুলো তারা তাদের নোটে উল্লেখ করেছেন। যাইহোক, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের ঐক্যমত রয়েছে। কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেগুলোতে আমরা একমত সেগুলো রিপোর্টের (viii), (ix), (x), (xii), (xiii), (xiv)

এবং (xvi) এ বর্ণিত। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের সংখ্যা সীমিত করার মত বিষয়ে অনুচ্ছেদ ১৯ এ আলোচনা করা হয়েছে এবং সারমর্ম অনুচ্ছেদ ২৭ এর (xi) তে রয়েছে, এ বিষয়ে চেয়ারম্যান ব্যাতীত আমরা সকলেই একমত। চেয়ারম্যান তার পৃথক অবস্থানের কারণ আলাদা নোটে বর্ণনা করেছেন। জাতীয় পরিষদে সংরক্ষিত আসনে নারীদের নির্বাচন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের আদিবাসী এলাকাগুলোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা প্রণয়নের পক্ষে একমত। এই দুই বিষয়ে আমাদের সুপারিশসমূহ রয়েছে অনুচ্ছেদ ২৪ এবং ২৫ এ এবং রিপোর্টের অনুচ্ছেদ ২৭ এর (xvii) এবং (xviii) এ সারমর্ম রয়েছে।

——————————————————————————————

Sd/- আখতার হুসাইন (AKHTER HUSAIN)

Sd/- এম. আর. খান (M. R. KHAN)                          Sd/- হাসান আলী (HASSAN ALI)

Sd/- মাসুদ আহমাদ (MASUD AHMAD) Sd/- ক্রাউধুরী সালাহউদ্দীন (CRAUDHARY SALAHUDDLN

Sd/- এ. মজীদ, সম্পাদক (A. MAJEED, Secretary)

ফেব্রুয়ারী ১৮, ১৯৬৩

Scroll to Top