চরমপত্র

চরমপত্র

….. ১৯৭১

মেজিক কারবার। ঢাকায় অখন মেজিক কারবার চলতাছে। চাইরোমুড়ার থনে গাবুর বাড়ি আর কেচকা মাইর খাইয়া ভোমা ভোমা সাইজের মছুয়া সোলজারগুলো তেজগাঁ-কুর্মিটোলায় আইস্যা- আ-আ-আ- দম ফেলাইতেছে। আর সমানে হিসাবপত্র তৈরি হইতাছে। তোমরা কেডা? ও-অ-অ-ভৈরব থাইক্যা আইছো বুঝি? কতজন ফেরত আইছো? অ্যাঃ ৭২ জন। কেতাবের মধ্যে তো দেখতাছি- লেখা রইচে ভৈরবে দেড় হাজার পোস্টিং আছিলো। ব্যাস ব্যাস আর কইতে হইবো না- বুইজ্যা ফালাইছি। বাকীগুলোর বুঝি হেই কারবার হইয়া গেছে। এইডা কি? তোমরা মাত্র ১১ জন কীর লাইগা? তোমার কতজন আছিলা? খাড়াও খাড়াও- এই যে পাইছি কালিয়াকইর-১২৫ জন। তা হইলে ১১৪ জনের ইন্নালিল্লাহে ডট ডট ডট রাজেউন হইয়া গেছে। হউক, কোন ক্ষতি নেই। কামানের খোরাকের লাইগ্যাই এইগুলর বাঙ্গালমুলুকে আনা হইছিলো। আরে এইগুলি কারা? যশুরা

কই মাছের মতো চোহারা হইছে কীর লাইগ্যা। ও-অ-অ তোমরা বুঝি যশোর থাইক্যা ১৫৬ মাইল দৌড়াইয়া ভাগোয়াট হওনের গতিকে এই রকম লেড়লেড়া হইয়া গেছো। অ্যাঁ: তুমি একা খাড়াইয়া আছে কীর লাইগ্যা? কী কইলা-তুমি বুঝি মীরকাদিমের মাল নাঃ- ও-অ-অ-অ বাকী হগগলগুলোরে বুঝি বিচ্ছুরা মেরামত আছে? গাং- এর পারে পাইয়া আর মাসে পানির মাইদে চুবানী মারছে। কেইসডা কী? আমাগো বকশীবাজারের ছক্ক মিয়া কান্দে কীর লাইগ্যা? ছকু-উ, ও ছক্ক! কান্দিস না ছকু, কান্দিস না। কইছিলাম না, ‘বাঙ্গাল মুলুকের কেদো আর প্যাকের মাইন্দে মছুয়াগো মউত তেরা পুকারতা হ্যা।’ নাঃ তখনই কী চোট-পাট-হ্যান করে গা, ত্যান করেগা; আর তখন অখন তো মওলবী সাবরা কপিকলে মাইদে পড়ছে। সামনে বিচ্ছ, পিছনে বিচ্ছ, ডাইনে বিচ্ছ, বাঁয়ে বিচ্ছ। অখন খালি মছুয়ারা চিল্লাইতাছে। ইডা হ্যামি কী করছুনুরে, হামি ক্যা নানীর বাড়িতে আচ্ছিনুরে। হামি ইডা কী করণুরে।’ আতকা আমাগো ছক্ক মিয়া কইলো, ‘ভাইসাব, আমার বুকটা ফাইট্যা খালি কান্দন আইতেছে। ডাইনা মুড়া চাইয়া দেহেন ওইগুলা কী খাড়াইয়া রইছে। কী লজ্জা, কী লজ্জা মাথাডা এ্যাঙ্গেল কইরা তেরহী নজর মারতে দেহী কী! শও কয়েক মছুয়া অক্করে চাউয়ার চাপ মানে কিনা দিগম্বর সাধু হইয়া খাড়ইয়া রইছে। ব্রিগেডিয়ার বশীর তাগো জিগাইলো “তুম লোগকো কাপড়া কেধায় গিয়া? জবাব আইলো যশোরে সার্ট, মাগুরায় গেঞ্জী, গোয়ালন্দে ফুলপ্যান্ট আর আচিায় আণ্ডারউইয়ার থুইয়া বাকী রাস্তা খালি চিল্লাইতে চিল্লাইতে আইছি-হায় ইয়াহিয়া ইয়ে তুমনে কেয়া কিয়া- হামলোগ তো আভি নাঙ্গা মছুয়া বন গিয়া?’ আতকা ঠাস ঠাস কইরা আওয়াজ হইলো- ডরাইয়েন না ডরাইয়েন না। মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী চুলে ভর্তি সিনা চাবড়াইতে শুরু করেছে- ‘পদ্মা নদীর কূলে আমরা নানা মরেছে, পদ্মা নদীর কূলে মওলবী রাও ফরমান আলী, ঠেটা মালেক্যা ভাগোয়াট হওনের গতিকে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল উ থান্টের কাছে খবর পাড়াইলো, হে প্ৰভু তোমার দিলে যদি আমাগো লাইগ্যা কোনরকম মহব্বৎ থাইক্যা থাকে, তা হইলে তুরনদ আমাগো কইয়া দাও কীভাবে বিচ্ছ আর হিন্দুস্থানী ফোর্সের পা ধরলে আমার লেড়লেড়া আর ধ্বজভংগ মার্কা বাকী সোলজারগো জানটা বাঁচানো সম্ভব হইব।’ এই খবর না পাইয়া জেনারেল পিয়াজী আর সেনাপতি ইয়াহিয়া কী রাগ? ছদর ইয়াহিয়া লগে লগে উ থান্টের কাছে টেলিগ্রাম করলো, ভাই উ থান্ট, ফরমাইন্যার মাথা খারাপ হওনের গতিকেই এইরকম কারবার করছে। হের চিডিডারে চাপিশ কইরা ফালাও। এদিকে আমি আর শাহনেয়াজ ভূট্টোর ডাউটফুল পোলা পোংটা সরদার জুলফিকার আলী ভুট্টোরে মিছা কথার ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করণের লাইগ্যা জাতিসংঘে পাড়াইতেছি। একটুক নজরে রাইকখো।” বেডার আবার সাদা চামড়ার কসবীগো লগে এথি-ওথি কারবার করণের খুবই খায়েশ রইছে। সাবে কইছে ভুট্টো ব্রাকেটে শপথ লওনের টাইম হয় নাইক্যা। ব্রাকেট শেষ জাতিসংঘে যাইয়া পয়লা রিপোর্টারগো লগে টুউ-উ মারত মানে কিনা লুকোচুরি খেলা খেলতাছিলো। তারপর জাতিসংঘে আতকা কান ধইর্যা উঠ বস উঠ বস কইরা ভুট্টো সাবে চিল্লাইতে শুরু করলো, আর লাইফে এইরকম কাম করুম না। বাঙ্গাল মুলুকে আমরা গেনজাম কইর্যা খুবই ভুল করছি। আমরা মাফ চাইতাছি, তোওবা করতাছি, কান ডলা খাইতাছি।- আমাগো এইবারের মতো ক্ষমা কইর্যা দেন। কিন্তু ভুট্টো সাহবে বহুত লেইট কইর্যা ফালাইছেন। এইসব ভোগাচ কথাবার্তায় আর কাম চলবো না। ঠাস ঠাস কী হইলো? কি হইলো? সোভিয়েত রাশিয়া জাতিসংঘে ভেটো মাইরা হগগল মিচকী শয়তানরে চীৎ কইর্যা ফালাইছে। কইছে ফাইজলামীর আর জায়গা পাওনা? এদিকে সপ্তম নৌবহরের সিঙ্গাপুরে আনছে। লগে লগে সোভিয়েট রাশিয়া একটুক হিসাব কইর্যা কামকরণের লাইগ্যা হোয়াইট হাউসরে এ্যাডভাইসিং করছে। প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগদি ক্রেমলিন থাইক্যা কইছে পাক-ভারত উপমহাদেশে বাইরের কেউ নাক না গলাইলেই ভালো হয়। ব্যাস, আমেরিকার সপ্তম নৌবহর সিঙ্গাপুর আইস্যা নিল-ডাউন হইয়া রইলো। এ্যাঃ এ্যাঃ এই দিককার কারবার হুনছেন নি? হারাধানের একটা ছেলে কাঁদে ভেউ ভেউ, হেইটা গেলো গাথার মাইন্দে

রইলো না আর কেউ। জেনারেল পিয়াজী সরাবন তহুরা দিয়া গোসল কইর্যা ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের মাইন্দে হান্দাইয়া এখনও চ্যাঁ চ্যা করতাছে, আমার ফোর্স ছেরাবেরা হইলে কি হইবো? পাইট করুম, পাইট করুম। আমাগো মেরহামত মিয়া আতকা চিল্লাইয়া উঠলো এইডা কী? এইডা কী? জেনারেল পিয়াজীর ফুলপ্যান্টোর দুই রকম রং দেখতাছি কীর লাইগ্যা? সামনের দিকে খাকী রং, পিছনের মুড়া বাসন্তী রং, কেইসডা কী? অনেক থিংক করলে বোঝন যায় এর মাজমাডা। হেইর লাইগ্যা কইছিলাম…

(এম আর আখতার রচিত)

Scroll to Top