গনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, এক ব্যক্তি এক ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচন ও অধিক স্বায়ত্বশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইয়াহিয়া খানের বক্তৃতা

<2.105.483>

শিরোনাম সূত্র তারিখ
গণপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, এক ব্যক্তি এক ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচন ও অধিক স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইয়াহিয়া খানের বক্তৃতা দ্য ডন ২৯ নভেম্বর, ১৯৬৯

 

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ হতে সংগৃহীত

 (২৮ নভেম্বর, ১৯৬৯)

আমার প্রিয় দেশবাসী,

আমি আপনাদের উদ্দেশ্যে সর্বশেষ ভাষণ দিয়েছি ২৮ জুলাই। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে এবং দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার যে মূল লক্ষ্যসমূহ আমার গত ভাষণে উল্লেখ করেছি তা অর্জনের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

*    *    *    *    *    *

দেশ যে রাজনৈতিক ও সংবিধান বিষয়ক সমস্যার মুখোমুখি এখন সেই ব্যাপারে আসি। আমার গত ভাষণে আমি আশা প্রকাশ করেছিলাম যে দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দেশের ভবিষ্যত সংবিধান নিয়ে ঐক্যমতে আসবে। এটা দুঃখজনক যে তারা সেটা পারেননি, কিন্তু যে কেউ তাদের সমস্যাগুলো বোঝে এবং মূল্যায়ন করে। আমি আপনাদের সাথে কথা বলার পর থেকে এবং যেহেতু কোন আনুষ্ঠানিক ঐক্যমত্য এখনো আসেনি তাই বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা এবং অন্যান্য ব্যাক্তিবর্গ যারা এই সমস্যাগুলো নিয়ে সচেতন তাদের সাথে কথা বলা অব্যাহত রেখেছি। বিভিন্ন মানুষজন এইগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন সে বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ সচেতন। 

ক্ষমতার হস্তান্তর

যে দিন থেকে দেশের প্রশাসনের দায়িত্ব আমার উপর এসেছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্যাটি আমাকে চিন্তিত রেখেছে তা হল জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পদ্ধতি। আমার লক্ষ্য হল জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, কিন্তু এই লক্ষ্য কোন সুনির্দিষ্ট কাঠামো ছাড়া অর্জন সম্ভব নয়। আপনারা জানেন যে, এটি আমাদের কাছে এই মুহুর্তে নেই। এটা আমার জন্য প্রয়োজনীয় যে দেশের প্রেসিডেন্ট এবং সামরিক আইন প্রশাসনের প্রধান হিসেবে আমার সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এই বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া। আমি স্বভাবিকভাবেই এই বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছি এবং নির্বাচন হওয়ার মত চারটি সম্ভাব্য পদ্ধতি ভেবে বের করতে পেরেছি।

একটি পদ্ধতি হতে পারে একটি নির্বাচিত সাংবিধানিক প্রতিনিধিসভা থাকবে যার কাজ হবে নতুন সংবিধান তৈরী করা এবং তারপর নিজ থেকেই বিলুপ্ত হওয়া। এটি একটি পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থা কিন্তু এর কিছু বাজে দিক রয়েছে, প্রধান দিকটি হল, এর সাথে দুটি নির্বাচন বিজড়িত। একটি হল কনভেনশন নিজে এবং অন্যটি সেই কনভেনশন প্রণীত সংবিধানের আলোকে জাতীয় সংসদ। অন্য দিক যেটি আরও মারাত্নক সেটি হল এই পদ্ধতি ক্ষমতা হস্তান্তরে অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব ঘটাবে।

পরবর্তীটি হল ১৯৫৬ এর সংবিধানকে ফিরিয়ে আনা কিন্তু দেশের দুই অংশেই এই পদ্ধতির বিরোধী অনেক, কারণ সংবিধানটির কিছু ব্যাপার যেমন এককেন্দ্রীক ব্যবস্থা এবং সাম্যতা সকল জনগণের কাছে গ্রহনযোগ্য নয়।

তৃতীয় বিকল্পটি ছিল একটি শাসনতন্ত্র রচনা করা এবং এর জন্য দেশে একটি গণভোটের আয়োজন করা। এটিরও কিছু সমস্যা আছে যেমন সংবিধানের মত এত বিস্তারিত একটি বিষয়ের জন্য উত্তর হিসেবে শুধু হ্যা অথবা না জানানো জনগণের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না।

চতুর্থ উপায়টি ছিল বিভিন্ন গ্রুপ এবং রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আলোচনা করে পাশাপাশি পাকিস্তানের অতীত সংবিধানসমূহ এবং জনসাধারণের মতামতকে আমলে নিয়ে সাধারণ নির্বাচনের জন্য একটি আইনি কাঠামো দাঁড় করানো। আমার তরফ থেকে এই প্রস্তাব শুধুমাত্র একটি খসড়া আইনি কাঠামো হবে। 

অনেক চিন্তা ভাবনার পর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি চতুর্থ পথটি বেছে নিতে,  যেটি হল জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের জন্য একটি আইনি কাঠামো। যা আমি জুলাইয়ের ভাষণে বলেছিলাম, এটা আমার কাছে প্রমাণিত হয়েছে যে জাতি হিসেবে সংবিধানের ক্ষেত্রে আমাদের তিনটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়, প্রথমটি হল, একতার প্রশ্ন, দ্বিতীয়টি হল এক ব্যাক্তি এক ভোটের বিপরীতে সমতা এবং তৃতীয়টি, কেন্দ্র এবং প্রদেশের মধ্যে সম্পর্ক।

যেহেতু দেশে কয়েকমাস ধরে সাংবিধানিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়ে আসছে, আমি জানতাম প্রথম দুটি ইস্যুর সমাধান নির্বাচনের পূর্বেই হবে কারণ এগুলো নির্বাচনের এবং জাতীয় পরিষদ গঠনের সাথে সম্পর্কিত।  অন্যান্য সাংবিধানিক ইস্যুগুলো যেমন সরকারের সংসদীয় ফেডারেল রূপ, সরাসরি ভোট, নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহ এবং আইন আদালতের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং সংবিধানের রক্ষাকর্তা হিসেবে এর ভূমিকা এবং সংবিধানের ইসলামী চরিত্রকে সংরক্ষণকরা যার ভিত্তিতে পাকিস্তানের সৃষ্টি, এই বিষয়গুলোতে কোন দ্বিমত নেই এবং মীমাংসীত বিষয় হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। 

যে ইস্যুগুলো আমি উল্লেখ করেছি সেগুলো নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত মতামত রয়েছে এবং আমি আমার শেষ ভাষণে এটি পরিষ্কার করেছি যে এগুলো নির্বাচন ইস্যু হবে না। আমি জানতে পেরে খুশি যে এই মতানৈক্য কমে এসেছে।  এটি একটি শুভ সংকেত। যদিও কোন আনুষ্ঠানিক সর্বদলীয় সভা হয় নি, প্রেসে বিবৃতি প্রদান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সভার মাধ্যমে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল মতৈক্যের কাছাকাছি পৌঁছেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আমার পরিদর্শনের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং অংশের সাথে সাক্ষাৎ থেকে আমার কাছে পরিষ্কার যে এই প্রশ্নগুলোতে তাদের মধ্যে খুব কমই বিভক্তি রয়েছে। এটি আমার চিন্তাভাবনায় অনুপ্রেরণা এনেছে যে এই ইস্যুগুলো নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না কারণ জাতীয় ভাবে আলোচনার মাধ্যমে এবং সুস্থ চিন্তা ধারার মাধ্যমে আমাদের মনে হয় আমরা সমাধানের অনেক কাছাকাছি এসে গিয়েছি এবং এগুলো যদি নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট হয় তাহলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, কারণ এই ইস্যুগুলো অনুভূতির দিক থেকে অপ্রয়োজনীয় ভাবে  তিক্ততা সৃষ্টি করতে পারে এবং ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব ঘটাতে পারে।

এই গুরুত্বপূর্ণ তিনটি প্রশ্নের সমাধান সংক্ষেপে বলতে চাই যা আমি মনে করি সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য।

 

একক ব্যবস্থার প্রশ্নে পশ্চিম পাকিস্তানকে একটি অংশ হিসেবে ব্যবস্থাপনার থেকে পৃথক প্রদেশ তৈরীর প্রতি জনসাধারণের আগ্রহ বেশি।

 

এক ব্যক্তি এক ভোট প্রশ্নে এটিই ব্যাপকভাবে সমাদৃত যে এই ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য মৌলিকভাবে প্রয়োজনীয় এবং এটি শুধু পূর্ব অংশেই নয় পশ্চিম অংশেও গ্রহনযোগ্য যে জনপ্রতিনিধি এই ব্যবস্থার মাধ্যমেই ভোটে নির্বাচিত করতে হবে। যেমনটি বলেছিলাম, এক কেন্দ্রীকতা এবং প্রতিনিধিত্ত্বের বিষয়গুলো নির্বাচনের আগে নির্ধারন করা উচিত। সংবিধান চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

 

অতএব, এই দুই ইস্যুর সমাধান বিষয়ে আমার সিদ্ধান্ত নিচে উল্লেখ করলামঃ

 

একক ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হবে এবং পৃথক প্রদেশ তৈরী করা হবে। আমি যোগ করতে চাই যে একক ব্যবস্থা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এসেছিল, যেটি প্রাদেশিক বিধানসভা এবং দ্বিতীয় সাংবিধানিক পরিষদ দ্বারা অনুমোদন পেয়েছিল। ১৯৫৭ সালে পশ্চিম পাকিস্তান ভোট দিয়েছিল একক ব্যবস্থা বিলোপের পক্ষে। যদি ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন না আসত, একক ব্যবস্থা অনেক আগেই বিলুপ্ত হত।

 

আমি মনে করিয়ে দিতে চাই যে পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল একক ব্যবস্থার উপরে ভিত্তি করে নয়, বরং পশ্চিম পাকিস্তানে প্রদেশ থাকবে এই ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ ঐক্যমত যে একক ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে হবে। জনগণের ইচ্ছাই আমার সিদ্ধান্ত।

 

একই ভাবে জনগণের ইচ্ছানুসারে এক ব্যাক্তি এক ভোট প্রিন্সিপাল গ্রহন করেছি এবং আসন্ন জাতীয় পরিষদ নির্বাচন এই গণতান্ত্রিক প্রিন্সিপালের উপর ভিত্তি করে হবে।

 

কেন্দ্র এবং প্রদেশের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে আমার জুলাই ভাষণে আমি উল্লেখ করেছিলাম যে, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অংশ নেয়ার সুযোগ কম ছিল। আমি এটা বলেছিলাম যে, এই বিষয়ে তাদের অসন্তোষ যৌক্তিক। আমাদের এই ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। এজন্য প্রয়োজন পাকিস্তানের দুই অংশের সর্বোচ্চ স্বায়ত্ত্বশাসন যতক্ষণ না তা দেশের জাতীয় ঐক্য এবং সংহতির ক্ষতি না করে।

কেন্দ্র এবং প্রদেশের সম্পর্কের একটি প্রধানতম দিক অর্থনৈতিক বলয়ে নিহিত। ফেডারেশন বলতে শুধু আইনগত ক্ষমতা নয়, অর্থনৈতিক ক্ষমতাকেও বোঝায়। এই বিষয়কে এমনভাবে মোকাবেলা করতে হবে যেন আইঙ্গত দিক এবং প্রদেশগুলোর চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সার্বিকভাবে দেশের চাহিদাও মেটানো যায়। পাকিস্তানের দুই অংশের জনগণের নিজ নিজ অর্থনৈতিক রিসোর্স এবং উন্নতির উপর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে যতক্ষণ না এটি কেন্দ্রে থাকা জাতীয় সরকারের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া না ফেলে। পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং আত্নিক বন্ধনে আবদ্ধ। সুতরাং এখানে সন্তোষজনক সম্পর্কের সাথে কাজ করতে না পারার কোন কারণ নেই, পাকিস্তানের কেন্দ্রে এবং প্রদেশে দুই অংশের জনগণই সমতা এবং সম্মানজনক অংশীদার হিসেবে একত্রে থাকবে।

জনগণ দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়সূচী আমি এখন আপনাদের দিতে চাই। প্রথমত, নির্বচনের জন্য প্রোভিশনাল আইনি কাঠামো ৩১ মার্চ, ১৯৭০ এর মধ্যে প্রস্তুত করা হবে। পরবর্তীতে, যেটি ইতোমধ্যেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘোষনা করেছেন, ভোটার তালিকা জুন, ১৯৭০ এর মধ্যে প্রস্তুত করা হবে। ভোটার তালিকা প্রস্তুত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন প্রোভিশন অনুযায়ী কেন্দ্র এবন প্রাদেশিক উভয় নির্বাচনের জন্য আইনি জটিলতা কমাতে কাজ করবে যেট আইনি কাঠামোতে থাকবে। আপনারা অবগত আছেন যে, জনগণের কোন আপত্তি থাকলে তা শোনার পর জটিলতা কমানোর কাজ সমাপ্ত হচ্ছে। যাই হোক, এই কাজের জন্য কিছু সময় দেয়া লাগবে। এছাড়াও ১ জুন হতে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য বিরূপ আবহাওয়া থাকবে। তাই আমি  ৫ অক্টোবর, ১৯৭০ তারিখে দেশে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জাতীয় পরিষদ সংবিধান তৈরীর পর প্রাদেশিক নির্বাচন হবে। পরিষদের এই কাজ সম্পন্ন করতে প্রথম কার্যদিবস হতে ১২০ দিন লাগবে। আমি খুশি হব তারা যদি নির্ধারিত সময়ে আগেই কাজ সম্পন্ন করে। যাইহোক, তারা যদি বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে পরিষদ বিলুপ্ত হবে এবং জাতি আরেকটি নির্বাচনের দিকে যাবে। আমি আশা করি এবং প্রার্থনা করি এটি ঘটবে না এবং অনুরোধ করি ভবিষ্যৎ জনপ্রতিনিধিদের এই কাজ প্রচুর দায়িত্ববোধ এবং দেশপ্রেমের সাথে সম্পন্ন করতে।

জাতীয় পরিষদে ভোট বিষয়ে বলতে হয়, এটি গুরুত্বের সাথে স্বীকার্য যে পরিষদ সংবিধানের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।  সংবিধান একটি পবিত্র দলিল এবং এটি একসাথে থাকার একটি অঙ্গীকারনামা। এটিকে কোন সাধারণ আইনের সাথে তুলনা করা যাবে না। অতএব, এটি প্রয়োজনীয় যে, ভোটদান পদ্ধতি যেটি পরিষদ দ্বারা ঠিক করা হবে সেটিকে পাকিস্তানের সকল অংশের জনপ্রতিনিধির জন্য স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হতে হবে। পরিষদ তার কাজ সম্পন্ন করার পর এবং সংবিধান উপযুক্ত অথরিটি দ্বারা তৈরি হবার পর, এটিকেই পাকিস্তানের সাংবিধানিক চরিত্র হিসেবে মনে করা হবে। তারপর নতুন সরকার তৈরীর ক্ষেত্র তৈরি করা হবে। 

এইসকল কার্যক্রমের মধ্যেও সামরিক আইন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বলবত থাকবে জনগণ দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি আপনাদের জোর দিয়ে বলতে চাই যে আমরা আমাদের জাতীয় জীবনের সবথেকে সংকটময় সময় পার করছি। আপনাদের প্রত্যেকেরই এই বিষয়টি বোঝা প্রয়োজন এবং শৃঙ্খল, দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক আচরণ করা প্রয়োজন। চলুন সকলে ব্যাক্তি স্বার্থ ছাড় দিয়ে চলি এবং ব্যক্তিগত ও দলীয় মতামতকে পাশে রাখি। আসুন আমরা প্রত্যেকেই নিজেকে বলি যে জাতিকে শক্তিশালী ও অগ্রগামী করতে সামর্থ্যের মধ্যে সবকিছুই করব।

 

<2.105.487>

 

আমার দিক হতে, আমি আপনাদের সামনে একটি নির্বাচনসূচী উপস্থাপন করেছি, যেটিকে আমি সকল সততার সাথে মনে করি  মনে করি সাধারণ জনগণের নিকট সবথেকে গ্রহনযোগ্য এবং সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানের স্বার্থের পক্ষে।

আমার জনগণের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। আমাদের দেশ যার সৃষ্টি হয়েছিল আমাদের আদর্শের উপর ভিত্তি করে এবং দশ লক্ষ্য মুসলমানের আত্মত্যাগের মাধ্যমে, তার ভবিষ্যতের প্রতিও আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।

সবশেষে, আমি বলতে চাই আমি যে সূচী এখানে উল্লেখ করেছি, তার জন্য ১লা জানুয়ারি, ১৯৭০ থেকে সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড পূর্ণরূপে চলতে পারবে। সামরিক আইনের যে সকল ধারা এরূপ কর্মকান্ডকে নিষিদ্ধ করেছিল, সেগুলো রদ করা হবে। আমি যোগ করতে পারি যে গণতন্ত্র পুনরায় আনতে কোন প্রকার বাধা সহ্য করা হবে না। কোন ব্যাক্তি অথবা কোন গ্রুপ যদি আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা তৈরী করে অথবা ধ্বংসাত্নক কার্যক্রমে সহায়তা করে তবে কঠোরভাবে তা মোকাবেলা করা হবে, কারণ গণতন্ত্র সহনশীলতা এবং শক্তি প্রয়োগের ভুল দিকগুলো। অতএব, সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড অবশ্যই আচরণ বিধিমালা মেনে চলতে হবে। এই উদ্দেশ্যে অদূর ভবিষ্যতে আমি বিধিমালা প্রস্তাব করব।

চলুন সকলে মিলে সামনের দিকে এগিয়ে যাই এবং ক্ষমতা হস্তান্তর শান্তিপূর্ণ এবং সভ্যভাবে সম্পন্ন করি।

খোদা আপনাদের মঙ্গল করুন

পাকিস্তান পাইন্দাবাদ

 

Scroll to Top